কর্মসংস্থানের খোঁজে হিমশিম খাচ্ছে চীনের তরুণরা

65

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এখন অনেকটাই অস্থিতিশীল। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সংকটও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এদিক থেকে কঠিন পরিস্থিতিতে চীনের তরুণরা। বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষে কর্মজীবনে প্রবেশের ইচ্ছা থাকলেও দেশটিতে বেকারত্বের হার চরম পর্যায়ে। খবর এফএমটি।

Advertisement
spot_img

কভিড-১৯ মহামারীর কঠোর বিধিনিষেধ কাটিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে চীন সরকার। ঠিক সে সময় বিশ্লেষকরা নতুন সতর্কবার্তা দিয়েছেন। চলতি গ্রীষ্মে বেকারত্বের হার আরো বাড়তে পারে। ভালো বেতনের চাকরি বর্তমানে তেমন একটা নেই। যে কারণে অনেক তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে যাওয়াকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। অন্যরা সরকারি পর্যায়ে খণ্ড বা স্বল্পকালীন চাকরিতে যোগদানের চেষ্টা চালাচ্ছে। কেননা বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ একেবারে নেই বললেই চলে।

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে সম্প্রতি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন চীনা শিক্ষার্থী স্যাম্পসন লি। চাকরির সন্ধানে বেশ সময় ব্যয় করার পর ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য আবেদন করেন। ২৪ বছর বয়সী এ তরুণ জানান, তিনি চীনের সিলিকন ভ্যালি হিসেবে পরিচিত শেনজেনে একটি বড় প্রযুক্তি কোম্পানিতে তিন দফায় সাক্ষাৎকার দিয়ে পাসও করেছেন। কিন্তু এরপর নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। লি বলেন, ‘‌অন্য তিনটি কোম্পানি প্রতিযোগিতামূলক বাজারের তুলনায় কম বেতনে কাজ করার কথা জানিয়েছে। কিন্তু এত কম বেতনে শহরে অবস্থান করা সম্ভব না।’

সম্প্রতি দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো মে মাসে বেকারত্বের হার নিয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে। তথ্যানুয়ায়ী ১৬-২৪ বছর বয়সী তরুণদের বেকারত্বের হার ২০ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এপ্রিলে এ হার ছিল ২০ দশমিক ৪ শতাংশ। ম্যাককুয়ারি গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ ল্যারি হু সতর্ক বার্তায় জানান, আগামী জুলাইয়ে বেকারত্বের হার আরো বাড়তে পারে। কেননা সে সময় আরো ১ কোটি ১৬ লাখ গ্র্যাজুয়েট চাকরির সন্ধানে বাজারে আসবেন।

এএফপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‌গ্রাহক চাহিদা কম থাকায় কোম্পানিগুলো বেশি কর্মী নিয়োগ দিতে চাচ্ছে না। অন্যদিকে শ্রমবাজার দুর্বল থাকায় ভোক্তারাও ব্যয়ে অনাগ্রহী। এ কারণে বর্তমান পরিস্থিতি দোদুল্যমান।’

এপ্রিলে কাউন্সিল সম্মেলনে চীনের প্রিমিয়ার লি কিয়াং তরুণদের জন্য স্থিতিশীল কর্মসংস্থান পরিবেশ তৈরির অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘উৎপাদন থেকে শুরু করে বিদেশী বাণিজ্যিক কোম্পানিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামে পরিবর্তন আনতে হবে এবং বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ভোকেশনাল শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।’

চীনের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সরকার থেকে যে উদ্দীপনামূলক উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সেগুলোও ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে চাকরির বাজার চাঙ্গা করার বিষয়ও রয়েছে। একটা পর্যায়ে চীনের প্রাইভেট খাত সবচেয়ে বেশি অগ্রসর ছিল। কিন্তু দেশটির আবাসন খাতের কোম্পানি, প্রযুক্তি জায়ান্ট ও প্রাইভেট টিউটরিং ফার্মের ওপর সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধিনিষেধ ও নজরদারি প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিয়েছে।

লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক চাথাম হাউজের চীনা সিনিয়র গবেষক ইউ জি বলেন, ‘‌বেইজিং রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি পরিচালনা করলেও শহরের ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রাইভেট কোম্পানিই দেয়। যেসব তরুণ কম বেতনে বেশি সময় কাজ করতে চায় তাদের জন্য এ খাতগুলো টিকে আছে।’

Advertisement
spot_img