পদ্মা সেতুতে ব্যবসায়ীকে নির্যাতন, পুলিশের দুই কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

54

ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের ঘটনায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ও পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শুক্রবার (১৬ জুন) বিকেলে শরীয়তপুরের পুলিশের সুপার সাইফুল হক ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Advertisement
spot_img

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশের কপি শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পৌঁছেছে। মোস্তাফিজুর রহমানকে চট্টগ্রাম ও সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদকে বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। তারা শরীয়তপুরে কর্মরত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল হক বলেন, পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের শরীয়তপুর থেকে অন্যত্র সংযুক্ত করা হয়েছে।

নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। খুব শিগগিরই আপনাদের এ বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী ঠান্ডু চোকদার গত ১ জুন পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন যে, ৩১ মে গভীর রাতে তাকে বাড়ি থেকে থানায় তুলে আনেন জাজিরার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহমেদ। তারপর থানার একটি কক্ষে তাকে আটকে শারীরিক নির্যাতন করেন নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান। একটি ছিনতাই মামলার আসামি তার (ঠান্ডুর) আত্মীয় সাদ্দাম চোকদার, তার বাবা বাদশা চোকদার, বকুল চোকদার ও বকুল চোকদারের বাবা রশিদ চোকদারের পক্ষে ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে চাপ দেন। বিনিময়ে নাওডোবা বাজারে থাকা ওই ব্যক্তিদের দুটি দোকান তাকে লিখে দেওয়া হবে।

পুলিশের এমন কথায় ঠান্ডু রাজি হননি। তখন দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে মারধর করেন। ওসির কক্ষে আটকে চোখ বেঁধে তাকে দুই ঘণ্টাব্যাপী পেটানো হয়। একপর্যায়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে রাজি হলে তার চাচা রশিদ চোকদারের জিম্মায় ভোরে রাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরের দিন সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক নাওডোবা শাখার হিসাব নম্বরের ৫টি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকা লিখে দেন তিনি। ওই চেকগুলো ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে দেওয়া হয়। পুলিশের ঘনিষ্ঠ মো. শহীদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নামে চেক লিখে রাখেন।

শরীয়তপুরের নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদারকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক নেওয়ার ও একটি ছিনতাই মামলার ৪ আসামিকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় অভিযুক্ত নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনিরের বিরুদ্ধে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এর আগে গত ৭ জুন মোস্তাফিজুর রহমানকে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা থেকে বদলি করে জেলা পুলিশ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছিল।

ঠান্ডু চোকদারের ওই অভিযোগটি তদন্ত করছিলেন শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান। বৃহস্পতিবার তিনি পুলিশ সুপারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এরপরই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার সদ্য বদলি হয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ও পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান বলেন, এক ব্যবসায়ী তাকে নির্যাতন করে ৭২ লাখ টাকার চেখ লিখে নেওয়ার একটি অভিযোগ করেছিলেন দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ২ জুন থেকে ঘটনাটি তদন্ত করেছি। বৃহস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সুপারের নিকট জমা দিয়েছি।

সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মোস্তাফিজুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে- এমন খবর লোকমুখে শুনেছি। কোনো আদেশ পাইনি। আমি এ ঘটনায় জড়িত নই। কেউ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগও করেননি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ পালন করেছি। এ কারণে আমাকে কেন শাস্তি দেওয়া হবে? বিষয়টি আমার কাছে বোধগম্য না।

Advertisement
spot_img