আইএমএফ আমাদের গুরু নয় : পরিকল্পনামন্ত্রী

51

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আমাদের গুরু নয়। বিশ্বব্যাংক যেমন ঋণ দেয় তেমনি আইএমএফও ঋণ দেয়।

Advertisement
spot_img

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘বাজেট ২০২৩-২৪: শিক্ষা ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আইএমএফ আমাদের বাজেট পরিচালনা করে না। বিশ্বব্যাংক, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক, কুয়েত ডেভেলপমেন্ট ফান্ড যেমন ঋণ দেয় তেমনি আইএমএফও ঋণ দেয়। তবে আইএমএফ ঋণের সঙ্গে কিছু সলা-পরামর্শ দেয়। আমরা আইএমএফ এর সদস্য রাষ্ট্র। তারা আমাদের ঋণ দিতে বাধ্য। আইএমএফ এর বোর্ড অব অনারে আমরা আছি। তারা যে সব সলা-পরামর্শ দেয় সেগুলো আমাদের থেকে অনুমোদন করা হয়। এর বাইরে তারা আলাদা কন্ডিশন দিতে পারবে না। তাই কেউ যদি মনে করে আইএমএফ এর দ্বারা আমরা আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা, আইএমএফ বাজেট তৈরি করেছে, এটি সঠিক নয়। এটি আমাদের জন্য অপমানজনক, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার অ্যান্ড বাজেট পলিসি রিচার্স সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ। এ ছাড়া, সম্মানিত অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, মূল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এবং এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. দেওয়ান এম হুমায়ুন কবির।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাজেটের মধ্যে ভালো ও মন্দ দুটো দিকই আছে। সেটা দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। আমি বলি শিক্ষাতে আরও বেশি বিনিয়োগ দরকার। কারণ শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ কখনও নষ্ট হবে না, কাজে লাগবে। চাকরিই শিক্ষার উদ্দেশ্য নয়। শিক্ষা তো অন্য বিষয়। শিক্ষা হলো আমাকে সচেতন করার, একজন মানুষ হিসেবে বুঝার ক্ষমতা দান করার হাতিয়ার। তাই এ খাতে আরও বেশি বরাদ্দ দিতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সে চেষ্টা করছেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পাশাপাশি বাজেটে ‘গবেষণা ও উন্নয়ন’ নামে আলাদা একটি খাত তৈরিতে জোর দিতে হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। জিডিপির তুলনায় প্রস্তাবিত বরাদ্দ নেমে এসেছে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশে, যেখানে বিগত অর্থবছরে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

তিনি বলেন, কলম উৎপাদনের ওপরে প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিদেশি সফটওয়্যারে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। আবার বিদেশি সফটওয়্যারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাটও বসবে। শিক্ষা ও ডিজিটাল খাতে এই প্রস্তাবনা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই প্রস্তাবনা পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন।

ড. এম আবু ইউসুফ আরও বলেন, প্রত্যাশা ছিল বাজেটে শিখন ঘাটতি নিয়ে পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা থাকবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এর শিক্ষা ঘাটতি গবেষণা ২০২২ অনুযায়ী, মহামারি কালীন সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় স্কুল বন্ধের কারণে শিক্ষা ঘাটতি সবচাইতে বেশি হয়েছে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। এই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা ঘাটতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পঞ্চম শ্রেণির ১৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলাদেশ এবং গ্লোবাল স্টাডিজে এবং ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ ইংরেজিতে শিক্ষা ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই বড় ধরনের শিখন ঘাটতি হয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক সংকটে পড়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের অনেক শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ২০২২-এর রিপোর্ট অনুসারে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ৩৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে শিখন ঘাটতি পূরণে জাতীয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচির শিক্ষা খাতে বিশেষ বরাদ্দ যা সর্বাধিক প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের জন্য নিবিড় তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

Advertisement
spot_img