পুরাতন সিলেবাস দ্রুত শেষ করে নতুন সিলেবাস শুরু করা- চবি উপাচার্য

173

পহেলা বৈশাখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শপথ হোক, পুরাতন সিলেবাস দ্রুত শেষ করে নতুন সিলেবাস শুরু করা। আগামীতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে একাডেমিক ফ্লেভার যুক্ত করার চেষ্টা করা হবে। আজ (১৪ এপ্রিল ২০২৫) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলা প্রাঙ্গণে পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার এসব কথা বলেন।

Advertisement
spot_img

উপাচার্য পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং দেশের সর্বস্তরের জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক গৌরবের প্রতীক। দিনটি আমাদের জাতিগত পরিচয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ও নবজাগরণের প্রেরণার উৎস। তিনি বৈশাখের প্রথম প্রহরে ‘এসো হে বৈশাখ’ গানে পুরাতন বছরের ক্লান্তি ও দুঃখ ভুলে নতুন আশার আলোয় এগিয়ে চলার শপথ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি প্রশ্ন রেখে আরও বলেন, আমাদের দেশে কি গীতিকারের এতই দুর্ভিক্ষ? ‘এসো হে বৈশাখ’ এ গানের পাশাপাশি আর কোনো গান কি গীতিকাররা রচনা করতে পারেন না? তিনি বাংলা সংস্কৃতিকে ধারণ, লালন ও চর্চা করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, স্থানীয় গ্রামবাসীসহ সকলকে মিলেমিশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বৈষম্যহীন একাডেমিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও পহেলা বৈশাখ উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মু. জাফরউল্ল্যা তালুকদার, স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চবি প্রক্টর ও অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব প্রফেসর ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ।

উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) উপস্থিত সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নববর্ষ উদযাপন তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব কৃষ্টি, তাহজীব-তামাদ্দুনকে সামনে রেখে বর্ষবরণ করা হয়। বর্ষবরণ হচ্ছে গত বছর যেসব অন্যায় করেছি, পাপাচারে লিপ্ত হয়েছি, যেসব দুর্নীতি করেছি সেগুলো থেকে মহান আল্লাহর কাছে, জাতির কাছে ও রাষ্ট্রের কাছে ক্ষমা চাওয়া। প্রতিজ্ঞা করা সামনের বছরে যেন কোনো অন্যায়, অবিচার ও দুর্নীতির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত না করি। তিনি আরও বলেন, আমরা দেখি বাংলা নববর্ষ মানে কিছু হুতোম প্যাঁচার ছবি আর মূর্তি বানিয়ে রাস্তায় রাস্তায় নামা হয়। এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতি হতে পারে না। তিনি জুলাই বিপ্লবের পর অর্জিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে একাডেমিক কার্যক্রমে বেশি করে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান।

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। তিনি চব্বিশের গণআন্দোলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’জন শহীদসহ সকল শহীদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। তিনি বলেন, আজ আমরা সবাই একত্রিত হয়ে সংস্কৃতি চর্চার কথা বলার সাহস পেয়েছি জুলাই বিপ্লবের সফল আন্দোলনের কারণে। তিনি আরও বলেন, পহেলা বৈশাখ এটি আমাদের ঐতিহ্যের দিক। আমাদের সন্তানেরা আম, জাম, কাঁঠাল চেনে কিন্তু এসব ফলের গাছ চেনে না। সেজন্যই পহেলা বৈশাখের ঐতিহ্য এবং এজন্যই পহেলা বৈশাখকে ধারণ করতে হবে। তিনি বলেন, আজ আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে অন্য সব সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ব্রিটিশরা দুই শত বছর আমাদের শাসন করে আমাদের সংস্কৃতি দখল করতে পারেনি। আমরা আমাদের সংস্কৃতি চর্চায় নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছি। তিনি বলেন, আমরা আমাদের সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি পরিহার করে নিজেদের সংস্কৃতিকে লালন করবো—এটাই হোক আজকের দিনের শপথ। তিনি চবি পহেলা বৈশাখ উদযাপন কমিটির সকল সদস্যসহ অনুষ্ঠান আয়োজক ও সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

“পহেলা বৈশাখে হোক অঙ্গীকার-আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের অধিকার” – এ স্লোগানকে ধারণ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বাঙালির শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বাংলা নববর্ষ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বৈশাখী শোভাযাত্রা, আলোচনা পর্ব, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আমন্ত্রিত ব্যান্ড দল ‘সরলা’র পরিবেশনা, পুতুল নাচ, নাগরদোলা, বলি খেলা, বউচি খেলা ও কাবাডি খেলা।

এছাড়াও দিনব্যাপী বৈশাখী ও লোকজ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০.৩০টায় চবি স্মরণ চত্বর থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বৈশাখী উৎসবের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে চবি জারুলতলায় মূল মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। এরপর মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চবি শিক্ষার্থী মো. শাহাদাৎ হোসাইন ও নিঝুম। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন চবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন হাফেজ মোহাম্মদ শাহ আযম, পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন রসায়ন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. তাপসী ঘোষ রায়, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন পালি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব শাসনানন্দ বড়ুয়া রুপন এবং পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রিয়াংকা পিংকি দারিং।

সবশেষে উপাচার্য গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী আয়োজনসমূহে অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানমালায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, অনুষদসমূহের ডিন, রেজিস্ট্রার, হলসমূহের প্রভোস্ট, বিভাগীয় সভাপতি ইনস্টিটিউটসমূহ ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টর, ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্র পরিচালক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement
spot_img