
অনেক দিন আগে রঙচটা পৃথিবীর গায়ে এক সুদীর্ঘ
সাইনবোর্ড লিখে ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম;
নক্ষত্রের নতুন আলোয় এক ধ্রুপদী বাসনার কথা লিখে।
অমাবস্যা আসুক পূর্ণিমা আসুক গহীন সমুদ্রে জাহাজের
হুইল ধরে সেদিন কলম্বাসের মতো দূর্দান্ত নাবিক হওয়ার
সাধ জেগেছিলো আমার মন আকাশে।
ভেবেছিলাম আইনস্টাইন হবো…..
জীবন তত্ত্বের জটিল সমীকরণগুলো খুব সহজে
তুড়ি মেরে মিলিয়ে নেবো।
সবুজ অরণ্যের বুকে চৌরঙ্গী বানিয়ে ঝর্ণার উচ্ছল
জলতরঙ্গ ও কাঁঠ গোলাপের নান্দনিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ
জীবনানন্দ দাসের মতো কবিতা লিখে হিমায়িত মনটাকে
গভীর উষ্ণতায় ডুবিয়ে রাখার কথাও ভেবেছিলাম কখনোসখনো।
সবুজ শ্যামল এই দেশটাকে ভালোবেসে বিপ্লবী হবার
চেতনায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের মতো
আগুন পৃথিবীর আগুনজলে পুড়ে পুড়ে খাঁটি সোনা
হবার আকাঙ্ক্ষা বাঁচিয়ে রেখেছিলাম মন ও মস্তিষ্কে!
আর ভেবেছিলাম, সাদাসিধে আটপৌরে জীবনের
খোলস ছেড়ে কোনো একদিন হয়ে যাবো
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের গীত কবিতার নন্দিনী!
অথবা কাউকে আজীবন পোড়াবো প্রেমে
নাটোরের বনলতা সেন হয়ে।
নতুবা, যদি কেউ ভালোবেসে কাছে টানে তেমন করে
তবে তার সাথে রোজ চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে
অনুভবে অনুক্ষণে, আকাঙ্ক্ষা ও প্রাপ্তিতে সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায় অথবা নির্মলেন্দু গুনের লেখা প্রিয়তমা
নারী চরিত্র হয়ে উঠবো অকাল বদনে।
আজকাল,
কবি আল মাহমুদ কিংবা উইলিয়াম ওয়ার্ডস ওয়ার্থের মতো যখনই কিছু লিখতে চাই তখনই আমার ভাবনাগুলো
পংক্তি হয়ে উঠার আগেই
বিস্ময়করভাবে এলেবেলে হয়ে যায় সবই!
বদলাচ্ছে, প্রতি মুহূর্তে বদলাচ্ছে, কিছু বুঝে উঠার আগেই
অদ্ভুত এক গ্রহে পরিণত হচ্ছে এই হতশ্রী দেশ,
হতশ্রী পৃথিবী….
শুধু শতকোটি বছর ধরে আমার ভিতরের আমিটাকে আজ-ও তেমন করে বদলাতে পারিনি ব’লে
এই নষ্ট পৃথিবীতে বিশ্বাস, শততা, সহানুভূতি ও ভরসার
যাদুকরী শব্দগুলো এখনো আমার বোধের দেয়ালে
অচল পয়সার মতো অস্পষ্ট এক ছাঁয়া হয়ে ঝুলছে!
হয়তো কোনো একদিন সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে
উড়ে আসা কোনো এক সাদা আলবাট্রস এসে বসবে
গহীন সমুদ্রের ঢেউ খেলানো তরঙ্গের বুকে ভেসে যাওয়া
দিকহারা জাহাজের মাস্তুলে,
প্রবল অন্ধকারের ভিতরেও সে আলো ছড়াবে আমার
চারপাশ জুড়ে….
নয়তো মহানায়িকা সুচিত্রা সেন ও সোফিয়া লরেনের মতো
একজন দক্ষ অভিনেত্রী হয়ে
এই আমিও জীবনের ভুলভাল রঙ্গমঞ্চে রঙমেখে সংসেজে
দিব্বি কাটিয়ে দিবো জীবনের বাকিটা পথ।
















