বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমানের জানাজায় ঢল নেমেছে গণমানুষের। প্রিয়নেতাকে শেষ বারের মত এক নজরে দেখতে চট্টগ্রাম নগর ও বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উপস্থিতি নগরের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের মাঠে এ জনস্রোত নামে।
স্মরণকালের বড় জানাজার সাক্ষী হলো চট্টগ্রামে মানুষ।চট্টগ্রাম মানুষের প্রিয় নেতা বাণিজ্যিক রাজধানীর ও চট্টগ্রামে অধিকাংশ স্থাপনার রুপকার আবদুল্লাহ আল নোমানের জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকে উত্তর,দক্ষিণ সহ দূর-দূরান্তের মানুষ আসতে থাকেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে।কাজির দেউরী,ওয়াসার আশে পাশের মসজিদ গুরলাতে জুমার নামাজ পড়ে মানুষের স্রোত এসে মিশে দামপাড়ায়। নেতা কর্মীদের হাতে ফুলের তোড়া, বুকে শোকের কালো ব্যাজ দেখা যায় ।জুমার পর দুপুর ২ টার মধ্যে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের মাঠ ভরে যায় মুসল্লিতে। পাশের রাস্তায় কানায় কানায় ভরে যায় । নামাজের আগে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে শেষবারের মতো অনেকে জননন্দিত রাজনীতিক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের মুখটি দেখেন নেতা কর্মী । কেউবা আবার ভিড় এড়িয়ে দূর থেকে নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এর আগে নাসিমন ভবন দলীয় কার্যলয়ে রাখা হয় কফিন।নেতা কর্মীরা সে খানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জুমার পরে চট্টগ্রামে আবদুল্লাহ আল নোমানের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় সংসদ ভবন,ধানমন্ডী ,নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে তিন দফা জানাজা অনুষ্টিত হয়।বাদ আসর রাউজান উপজেলার গহিরাস্থ নিজ বাড়েতে শেষ জানাজার পর বাবা মা এর কবরের পাশে দাফন করা হয়।
জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের মাঠে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, জামায়াতের মহানগর আমির শাহজাহান চৌধুরী, বিএনপি উত্তর জেলা আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার, মাহবুবের রহমান শামীম, মীর মোহাম্মদ হেলাল, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, আবুল হাশেম বক্কর, মরহুমের ছেলে সাঈদ আল নোমান সহ নেতা কর্মী বিভিন্ন দলের নেতা সর্বস্থরের জনতা ।
পরে জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয়ভাবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম এর নেতৃত্বে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
জানাজার আগে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান। নোমান ভাই পরিপূর্ণ রাজনীতিবিদ। তিনি সামাজিক আন্দোলন করেছেন। তিনি বিনয়ী ভদ্র মানুষ। মনে প্রাণে রাজনীতিবিদ ছিলেন, নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ ছিল। নোমান ভাই গণমানুষের নেতা ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়নে যে অবদান রেখে গেছেন তা কেউ ভুলতে পারবেনা।
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আবদুল্লাহ আল নোমান গণমানুষের নেতা ছিলেন। চট্টলার জন্য তিনি অনেক কিছু গড়ে গেছেন। তিনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন লড়াই করে বাচাঁতে হবে।শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আবদুল্লাহ আল নোমানের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। আমরা একসঙ্গে এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছিলাম। তিনি সাধারণ মানুষের রাজনীতি করেছেন।
মীর হেলাল বলেন,আবদুল্লাহ আল নোমান শুধু চট্টগ্রমের নেতা নয় তিনি স্বৈরচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ,খুনি শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে রুপকার ছিলেন।তিনি মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত নেতা কর্মীদের খবর নিতেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন বুঝে তিনি প্রথম দাবি তোলেন। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ও তার অবদান।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রয়ারি) ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসায় ইন্তেকাল করেন আবদুল্লাহ আল নোমান। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হেলিকপ্টার যোগে তার মরদেহ চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে আনা হয়। সেখান থেকে তার মরদেহ রাখা হয় কাজির দেউড়িস্থ ভিআইপি টাওয়ারের বাসভবন প্রাঙ্গণে।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, ৯টায় ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি নেওয়া হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারী-কর্মকর্তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর সকাল ১১টার দিকে নিয়ে যাওয়া হয় নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন মাঠে। সেখানে রাখা হয় দুপুর ১টা পর্যন্ত। পরে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় জমিয়তুল ফালাহ্ মসজিদ প্রাঙ্গণে।