এফডিআরের বিপরীতে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ

ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান ‘ডিসকো’ শওকতসহ ইস্টার্ন ব্যাংকের ৪৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

এফডিআরের বিপরীতে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ

98

ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান মো. শওকত আলি চৌধুরী প্রকাশ ‘ডিসকো শওকত’ এবং ব্যাংকটির পরিচালক ও কর্মকর্তাসহ মোট ৪৬ জনের বিরুদ্ধে ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন একজন ব্যবসায়ী। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালত এ নির্দেশ দেন।
মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাদী মো. মুর্তজা আলী একজন ব্যবসায়ী এবং ভাইয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক। ২০১৭ সালে তিনি ইস্টার্ন ব্যাংক ও আর নিজাম শাখায় পাঁচ কোটি ২০ লাখ টাকা সঞ্চয়ী হিসেবে জমা করেন। কিন্তু ব্যাংকের নিয়মনুযায়ী সঞ্চয়ী হিসাবের ওপর ৭ শতাংশ মুনাফা পাওয়ার কথা থাকলেও ব্যাংক তা দেয়নি। পরে ব্যাংকে থাকা অর্থের পরিমাণ মুনাফাসহ ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা দাঁড়ালে মর্তুজা আলী সেই অর্থ ইস্টার্ন ব্যাংকের চান্দগাঁও শাখায় স্থানান্তর করেন।

Advertisement
spot_img

২০১৭ ও ২০১৮ সালে মর্তুজা আলী ইস্টার্ন ব্যাংকের চান্দগাঁও শাখায় ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার ছয়টি এফডিআর (স্থায়ী আমানত) খোলেন এবং এর বিপরীতে একটি ওএসডি (সিকিউরড ওভারড্রাফট) ঋণের জন্য আবেদন করেন। ২০১৯ সালে বিদেশে থাকার সময় তিনি ব্যাংকটির চান্দগাঁও শাখায় তার নামে দুটি জাল সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট ও চারটি জাল ঋণ অ্যাকাউন্টের বিষয়ে জানতে পারেন। তার জাল স্বাক্ষর ও ভুল তথ্য দিয়ে ওই অ্যাকাউন্ট দিয়ে৯ কোটি ৭৭ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৭ টাকা লেনদেন করে পাঁচ কোটি ৪৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

বাদী তার সকল পাওনা বুঝে পেতে ইস্টার্ন ব্যাংক বরাবর লিখিত আইনি নোটিশ পাঠালেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মর্তুজা আলীর ইস্টার্ন ব্যাংক থেকে সব মিলিয়ে ১১ কোটি পাওনা বলে মামলার আরজিতে উল্লেখ করেছেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির এমডি আলী রেজা ইফতেখার, পরিচালক এম গাজিউল হক, সেলিনা আলি, আনিস আহমেদ, মুফাক্কারুল ইসলাম খসরু, গাজী মো. সাখাওয়াত হোসাইন, কে জে এস বানু, জারা নামরীন, ড. তাওফিক আহমেদ চৌধুরী, রুসলান নাসির, কে এম তানজিব উল হক, খন্দকার আতিক-ই রাব্বানী, মাহরীন নাসির, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শাহীন, সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদী জামান, রিয়াদ মাহমুদ চৌধুরী, এম খোরশেদ আনোয়ার, মাহমুদুন নবী চৌধুরী, এম খোরশেদ আলম, মহিউদ্দিন আহমদ, ইউনিট হেড মো. ওবাইদুল ইসলাম, মাহদিয়ার রহমান, মো. মাইনুল হাসান ফয়সাল, ট্রানজেকশন ব্যাংকিং হেড মো. জাবেদুল আলম ও হেড অব কর্পোরেট বিজনেস সঞ্জয় দাশ।
এছাড়া আসামি করা হয়েছে ব্যাংকটির হেড অব প্ল্যানিং আশরাফ উজ জামান, চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার মাসুদুল হক সরদার, হেড অব ট্রেড অপারেশন মো. মোকাদ্দাস, হেড অব ব্যাকিং মো. জাহিদ হোসাইন, হেড অব বিজনেস সৈয়দ জুলকার নাইন, হেড অব ডিজিটাল ফিন্যান্স আহসান উল্ল্যাহ চৌধুরী, চিফ টেকনোলজি অফিসার জাহিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. আবদুস সালাম, হেড অব কমিউনিকেশন জিয়াউল করিম, হিউম্যান রিসোর্সের প্রধান মনিরুল ইসলাম, হেড অব বিজনেস ইনফরমেশন মাসকুর রেজা, হেড অব ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট মোস্তফা সরওয়ার, কোম্পানি সেক্রেটারি মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, চান্দগাঁও শাখার ব্যবস্থাপক পারভেজ আলম, নিজাম উদ্দিন, ওআর নিজাম রোড শাখার ব্যবস্থাপক গোলাম মাইনুদ্দিন, কর্পোরেট এরিয়া হেড ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী এম এ কিউ সরওয়ার এবং সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অডিট প্রধান মো. রেজাউল ইসলামকে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হেলাল বিন মঞ্জুর তামিম বলেন, ব্যবসায়ী মুর্তুজা আলীর সঞ্চয়ী একাউন্টসহ এফডি (ফিক্সড ডিপোজিট) একাউন্ট খুলেন। এফডিতে তিনি বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা জমা করেন। এছাড়া সঞ্চয়ী হিসাবে ৫০ লাখ টাকা জমা ছিলো। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদসহ উচ্চ পদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে বিভিন্ন নামে এবং ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল নাম্বার দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলে। সেই অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করে বাদী বিদেশে থাকা অবস্থায় তারা এফডির বিপরীতে ঋণ নেয়। যা বাদী জানতেন না।তিনি বলেন, এফডিআরের লাভসহ সর্বমোট ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ মোট ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তাই মামলার আবেদন করা হয়েছে। আদালত মামলার আবেদন গ্রহণ করে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।উল্লেখ্য, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি’র চেয়ারম্যান ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরী চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ‘ডিসকো শওকত’ হিসেবে খ্যাত এবং পরিচিত। পাশাপাশি তিনি ফিনলে প্রপার্টিজ-এর পরিচালক ও অংশীদার।

Advertisement
spot_img