দেড়যুগ পর সোমবার চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে তাফসিরুল কোরআন মাহফিল

46

দেড়যুগ পর চট্টগ্রামে আবারও শুরু হচ্ছে তাফসিরুল কোরআন মাহফিল। ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের আয়োজনে ঐতিহাসিক প্যারেড ময়দানে আগামী সোমবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে পাঁচ দিনব্যাপী এই মাহফিল শুরু হবে। মাহফিল চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

Advertisement
spot_img

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় নগরের চকবাজার একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের এ তথ্য জানান।
১৯৭৭ সাল থেকে চট্টগ্রামে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন ‍শুরু করে। প্রথমবার নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গনে এ আয়োজন করা হয়। এরপর কখনও কলেজিয়েট স্কুলের মাঠে, কখনও লালদিঘী মাঠে এ আয়োজন করা হয়েছিল। ১৯৮৫ সাল থেকে চকবাজারের প্যারেড ময়দানে মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। ২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্যারেড ময়দানে মাহফিলের অনুমতি না দেওয়ায় ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ এবং জামায়াত ইসলামী চট্টগ্রামে এক সপ্তাহের হরতাল আহ্বান করেছিল। পরে সরকার আউটার স্টেডিয়ামে মাহফিলের অনুমতি দেয়।

২০০৬ সালে প্যারেড ময়দানে সর্বশেষ তাফসিরুল কোরআন মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০০৭ সালে এক-এগারো পরবর্তী জরুরি অবস্থা এবং পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ‘বাধায়’ এ মাহফিল আয়োজন করতে পারেনি ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবারও বিপুল সমারোহে এ মাহফিলের শুরু হচ্ছে।

অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের বলেন, এবারের তাফসির মাহফিলের প্রস্তুতি কাজ আরও আগে থেকে শুরু হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে তাফসির এন্তেজামিয়া কমিটি ও ১৯টি সাব-কমিটি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আল্লাহ তায়ালার মেহেরবাণীতে প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আশা করছি মাহফিলে বিপুল শ্রোতার সমাবেশ ঘটবে। আমরা অনুভব করছি সেই তুলনায় মাঠটি যথেষ্ট নয়। তাই আমরা সমাবেশের সংকুলান ও শুনার সুবিধার্থে যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

মুহাম্মদ তাহের বলেন, একসময় মাহফিলের মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকতেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। তিনি প্রয়াত হওয়ায় এবারের আকর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে মিজানুর রহমান আজহারীকে।মিজানুর রহমান আজহারী সাহেব মেধাবী, জ্ঞান-গরিমা আছে। একজন ভালো বক্তা। তিনি ভালো আলোচনা করেন। মাহফিলের শেষদিন তিনি তাফসির করবেন। উনার বয়ান নিশ্চয় মানুষের ভালো লাগবে।
গোপালগঞ্জে সমন্বয়দের উপর ছাত্রলীগের হামলা

এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজসেবক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, পরিষদের সহকারী সেক্রেটারি ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, তাফসিরুল কুরআন মাহফিল এন্তেজামিয়া কমিটির প্রচার বিভাগীয় দায়িত্বশীল ও সাংবাদিক মুহাম্মদ উল্লাহ, ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সাংগঠনিক সেলিম উল্লাহ জামান প্রমুখ।

আয়োজকদের তথ্য অনুযায়ী, মাহফিলের প্রথম দিন বক্তব্য রাখবেন মাওলানা আবদুল্লাহ আল আমিন, দ্বিতীয় দিন মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনছারী, তৃতীয় দিন মুফতী আমির হামজা, চতুর্থ দিন মাওলানা কামালুদ্দীন জাফরী এবং পঞ্চম ও শেষ দিনে বক্তব্য রাখবেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী। সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্যারেড মাঠের মূল প্যান্ডেলে এবার মহিলা প্যান্ডেল থাকবে না। মূল প্যান্ডেলে থাকবে পুরুষ শ্রোতাদের বসার ব্যবস্থা, মেহমান ও সাংবাদিকদের বসার বিশেষ ব্যবস্থা, সেনিটেশন ব্যবস্থা, দর্শক-শ্রোতাদের মৌলিক প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণের সহায়তায় প্রয়োজনীয় স্টল। স্বেচ্ছাসেবকগণ মাঠের নিয়ম শৃঙ্খলা সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করবেন। সাথে থাকবেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

মহিলা প্যান্ডেল: মাহফিলের মহিলা শ্রোতাদের আসা যাওয়া বসা ও শুনার সহজ ব্যবস্থার উদ্দেশ্যে এবার মূল মাঠের দক্ষিণে মহসিন কলেজের মাঠ, কাজেম আলী হাই স্কুল ও গুলজার বেগম হাই স্কুলে এবং মূল মাঠের উত্তরে কিশালয় কমিউনিটি সেন্টার ও কাপাসগোলা কলেজে মহিলা প্যান্ডেল থাকবে। এই সব প্যান্ডেলে মহিলাদের বসার, শুনার ও প্রয়োজনীয় যথাসম্ভব সেনিটেশন ব্যবস্থা থাকবে। নিয়ম শৃঙ্খলার উদ্দেশ্যে মহিলা স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের সহায়তায় থাকবেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

মূল মাঠের চারপাশের এলাকায় অবস্থান ও শুনার ব্যবস্থা: প্যারেড মাঠের চতুর্দিকে দক্ষিণে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ মোড় ও জামালখান থেকে চেরাগীপাহাড় মোড় পর্যন্ত, উত্তরে মেডিকেল কলেজ ও পাঁচলাইশ থানা মোড় পর্যন্ত। পূর্বে চকবাজার ধুনির পোল ও বাকলিয়া এক্সেস রোড় এর সুবিধাজনক অংশ পর্যন্ত এবং পশ্চিমে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল পরবর্তী সি.জি.এস স্কুল মোড় পর্যন্ত। চারদিকের এ সব এলাকায় অবস্থিত মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মার্কেটগুলোর সদয় সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ সব এলাকায় যে সব শ্রোতা সমবেত হবেন তাদের শুনার ব্যবস্থা থাকবে। শান্তি ও নিয়ম শৃঙ্খলা সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক ব্যবস্থা রাখা হয়েছ। তাদের সহযোগিতার জন্য থাকবেন আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা।

 

Advertisement
spot_img