চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিনকে ঘিরে সংঘর্ষ, ভাঙচুরের অভিযোগে মামলায় আসামি ৬৩ আইনজীবীর জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। অন্যদিকে, এ আদেশে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সরকার হাসান শাহরিয়ার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভূইয়া।
তিনি বলেন, ‘চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন ঘিরে গত বছরের ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনায় যে মামলা হয়েছে, সেই মামলার আসামি ৬৩ জন আইনজীবী আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছেন। এক হাজার টাকার বন্ডে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেছেন মামলার চার্জশিট দায়ের না হওয়া পর্যন্ত।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জামিন প্রার্থী আইনজীবীরা এজলাসে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে এক ঘণ্টা ধরে শুনানি চলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আদালতে প্রবেশের দুটি পথেই চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। ব্যক্তিগত কোনো গাড়ি ছাড়া অন্যান্য যানবাহন আসা-যাওয়ায় কড়াকড়ি করা হয়েছে। এছাড়া সন্দেহজনক কাউকে দেখতে পেলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে এজলাস পর্যন্ত দুপাশ ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং সেনাসদস্যরা সতর্ক অবস্থানে করেন।
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘আজ আদালতে ৬৩ জন আইনজীবীর আত্মসমর্পণের একটি বিষয় ছিল। এর প্রেক্ষিতে আমরা আদালত প্রাঙ্গণে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে শুনানি সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে, আদেশের পরপরই আইনজীবীদের একাংশ আদালত চত্বরে এসে নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর, ইসকনের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান, আলিফ ভাই কবরে খুনি কেন বাইরে’—এ ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তারা আসামি আইনজীবীদের জামিন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বিক্ষোভ করতে থাকেন।
আদেশের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব এবং বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, শহীদ আলিফ ভাইয়ের বড় ভাইয়ের মামলায় আজ যে আসামিরা আত্মসমর্পণ করেছেন তারা ছিলেন ঘটনার উস্কানিদাতা। এ ধরনের বিস্ফোরণ মামলার আসামিরা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে জামিন পায় না। হাইকোর্ট থেকে জামিন পায়। কিন্তু আজকে আদালত এই মামলায় ৬৩ জন আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন। শহীদ আলিফের হত্যাকারীদের জামিন দেওয়ায় আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ ধরনের আদেশে আমরা ক্ষুব্ধ।তিনি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দ্রুত চার্জশিট দিয়ে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির আদেশ দিয়ে মামলা নিষ্পত্তির দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত বছর ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত। ওইদিন জামিন চেয়ে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন তার অনুসারীরা। একপর্যায়ে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। আদালত প্রাঙ্গণের অদূরে বিক্ষুব্ধদের হাতে খুন হন সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে একজন আইনজীবী।