বিএসসির সভায় নৌ-উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত

ইনল্যান্ড পোর্ট পাবলিকের হাতে দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার

বিএসসির সভায় নৌ-উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত

56

ইনল্যান্ড পোর্ট পরিচালনার দায়িত্ব পাবলিকের দেওয়া কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের অনুমতিক্রমে কয়েকটি ইনল্যান্ড পোর্ট পাবলিকের হাতে দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। কারণ সরকার এই ধরনের ব্যবসা করতে পারে না।’

Advertisement
spot_img

রবিবার (২২ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম বোট ক্লাবে আয়োজিত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) ৪৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রামে সরাসরি বিনিয়োগ আনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বে টার্মিনালসহ অন্যান্য বন্দরে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ৬০০ বিলিয়ন ডলার বে টার্মিনালে বিনিয়োগ করার জন্য বসে আছে। চট্টগ্রাম পোর্টের যে সমস্ত সমস্যা, সেগুলো আমরা দূর করার চেষ্টা করছি। আমরা চট্টগ্রামে সরাসরি ফরেন ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থা করছি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান প্রায় পৌনে পাঁচশ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। এটা কিন্তু অনেক বড় বিষয়। গ্রাহকদের যে বিশ্বাস শিপিং কর্পোরেশনের উপর আছে, সে কারণে এটা হয়েছে। সরকার বিএসসির বহর বড় করার চেষ্টা করছে। সরকার অনুমোদন করলেই চারটি জাহাজের বিষয়ে আমরা চুক্তি সই করবো।’

জাহাজের বহর আরও বড় করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিপিং কর্পোরেশনের নিজস্ব টাকায় দুটো বাল্ক ক্যারিয়ার কিনছে। এ জন্য জাপানের দুটো জাহাজের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আমার হাতে যদি একশ টাকা ঘুষ খেয়েছে এমন কেউ ধরা পরেন। আমি চেষ্টা করবো তারি শান্তি নিশ্চিত করতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের শ্রমিকরা অধিকতর কাজ পাবে। বেতন হবে বর্তমান পে স্কেলের চাইতে আরও বেশি পে স্কেলে। এই যে আশা প্রত্যাশা আছে, তা আমি একটি বা দুটি-পাঁচটি লোকের হাতে নির্ভর করে রাখতে চাচ্ছি না। এ জন্য আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন। এটা চট্টগ্রামবাসীর জন্য গর্বের বিষয় হবে। চট্টগ্রাম বন্দর আন্তর্জাতিক মানে আরও উন্নত হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, আপনাদের সহযোগিতায় লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিপিং করপোরেশনের দেশের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এ প্রতিষ্ঠানকে আরও লাভজনক হওয়ার জন্য আমাদের নৌ উপদেষ্টা মহোদয় নিয়মিত চীন সরকার বা চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। দুইটি বাল্ক ক্যারিয়ার কেনার পাশাপাশি চীনের চারটি জাহাজ ক্রয়ের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ঋণ চুক্তি হয়ে গেলে চীন থেকে চারটি জাহাজ যুক্ত হবে। সব মিলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ১২টি জাহাজ যুক্ত হবে।

রেকর্ড মুনাফা করলো বিএসসি, ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা

কর সমন্বয়ের পর ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২৪৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা নিট লাভ করেছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)। যা গত ৫৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ওই অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আগের বছরের মত ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের বোট ক্লাবে ৪৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এ ঘোষণা দেন বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক।

তিনি বলেন, ‘সরকারের সহযোগিতা ও সক্রিয় দিকনির্দেশনার ফলে সংস্থাটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদানের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার লক্ষ্য রয়েছে।’

কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিএসসির পরিচালনা বাবদ ৪৮৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ১০৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা আয় হয়েছে। এতে মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৫৯৬ কোটি ১৯ লাখ টাকায়।’

‘অন্যদিকে পরিচালনা ব্যয় ছিল ১৮৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং প্রশাসনিক ও আর্থিক খাতে ব্যয় হয় ১২১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। যা সর্বমোট ব্যয় দাঁড়ায় ৩১১ কোটি ৬০ টাকায়। ফলে নিট মুনাফার ভিত্তিতে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করে পরিচালনা পর্ষদ।’-বলেন তিনি।
কমোডর মাহমুদুল আরও বলেন, ‘চলতি বছরের ৩০ জুন বিএসসির পরিশোধিত মূলধন ছিল ১৫২.৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের শেয়ার ৭৯.৪৬ কোটি টাকা (৫২.১০ শতাংশ) এবং বেসরকারি শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার ৭৩.০৭ কোটি টাকা (৪৭.৯০ শতাংশ)। ফলে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বিএসসির মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩,৮১১.৫৩ কোটি টাকা, যার বিপরীতে বহিঃদেনা ২,২৫৬.১৬ কোটি টাকা।’

শেয়ারবাজার থেকে অর্থ ব্যবহার প্রসঙ্গে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আরপিও (রিপিট পাবলিক অফার) এর মাধ্যমে সংগৃহীত ৩১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার মধ্যে ৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ২৫ তলা ভবন নির্মাণে ৫৯ কোটি ৩৫ লাখ, শেয়ার বাজারজাতকরণে ১৭ কোটি ৯৩ লাখ এবং ছয়টি জাহাজ ক্রয়ে ১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।’

উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকারের সহযোগিতায় বিএসসি ইতোমধ্যে ছয়টি নতুন জাহাজ সংযোজন করেছে, যার মধ্যে পাঁচটি বর্তমানে বহরে রয়েছে। ভবিষ্যতে আরও দুটি ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকার ও দুটি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’

‘বিএসসি নিজস্ব অর্থায়নে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে এবং শীঘ্রই ১২টি নতুন কন্টেইনার জাহাজ সংযোজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তায় ছয়টি নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন’— বলেন কমোডর মাহমুদুল।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ।

Advertisement
spot_img