পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামর সংবাদ সম্মেলন

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে জিইসির র‌্যাম্প নির্মাণ কার স্বার্থে?

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামর সংবাদ সম্মেলন

42

বাওয়া স্কুল ও জিইসি জংশনের মাঝে যে র‍্যাম্প নির্মাণের কাজ চলছে জনস্বার্থে তা বন্ধ করা অপরিহার্য বলে মনে করেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘ এই জায়গা এমনিতেই অত্যন্ত যানজট প্রবণ এলাকা। প্রতিদিন এখানে সকাল থেকেই রাত ৯-১০টা পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। এখানে নতুন র‍্যাম্প করলে মূল সড়কের প্রশস্ততা কমে গিয়ে জিইসি জংশনের যানজট বেড়ে যাবে। পাশাপাশি এম এম আলি সড়ক জংশন, ওয়াসা এবং লালখান বাজার মোড়ে যানজটের তীব্রতা বেড়ে যাবে। কারণ এ সকল জংশনে নতুন করে ডান দিকের ঘোরা (Right Turning) বেড়ে যাবে এবং র‍্যাম্পে উঠতে আবার ডানদিকে ও বাম দিকে ঘুরতে হবে যা যানজট ও দুর্ঘটনা বাড়াবে।’

Advertisement
spot_img

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

নগরবাসীর আপত্তির মুখেও ‘কার স্বার্থে’ বাংলাদেশ মহিলা সমিতি স্কুল ও হোটেল পেনিনসুলা পর্যন্ত চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প নির্মাণকাজ বন্ধ করা হচ্ছে না, প্রশ্ন তুলেছেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া। সাধারণ নাগরিকদের আপত্তির মুখেও নির্মাণকাজের গতি দেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে বলেও মনে করছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, যার মধ্যে অন্যতম লালখানবাজার-পতেঙ্গা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। শুরু থেকেই বিতর্কিত প্রকল্পটি বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজনদের মতামত এবং জনস্বার্থ উপেক্ষা করে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থে বাস্তবায়ন করা হয়।’

পরিবর্তিত সময়ে এই এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প স্থাপন নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি উল্লেখ করে সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘সবশেষে বিতর্কিত বেশ কয়েকটি র‍্যাম্প প্রকল্প থেকে সাময়িক বাদ দেওয়া হলেও বাওয়া স্কুল ও জিইসি জংশনের মাঝে হোটেল পেনিনসুলার সামনে থেকে প্রস্তাবিত র‍্যাম্পটি বাদ দেওয়া হয়নি। অপরিকল্পিত ও ব্যক্তিস্বার্থে নির্মাণাধীন এই র‍্যাম্পের বিরুদ্ধে সচেতন নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকরা প্রতিবাদ করার পরও এর নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়নি। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত গতিতে নির্মাণ করা হচ্ছে।’

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমরা জানতে চাই, কেন তা বন্ধ করা হচ্ছে না? কার স্বার্থে?’

 

তিনি বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে কার্যকর করতে যে র‍্যাম্প টাইগারপাসে নামানো হয়েছে সেটাকে উঠার ও নামার র‍্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। এর ফলে যে সকল গাড়ি লালখান বাজার, হোটেল রেডিসন ব্লু থেকে আসবে তাদেরকে রাইট টার্ন নিতে হবে না। অথবা যে র‍্যাম্প টাইগারপাসে নামানো হয়েছে সেটাকে শুধুমাত্র উঠার র‍্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা এবং যে র‍্যাম্প আমবাগানের দিকে নামানো হয়েছে তা দিয়ে লালখান বাজারমুখী গাড়িও নামতে পারবে। শুধু প্রয়োজন হবে একটা সুপরিকল্পিত জংশন ডিজাইন।’

বর্তমানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন জায়গায় র‍্যাম্প নামাচ্ছে ও উঠাচ্ছে অভিযোগ করেন সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘যেসব জায়গায় র‍্যাম্প নামাচ্ছে বা উঠাচ্ছে সেখানে নিচের মূল সড়কের প্রশস্ততা কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে অগ্রাধিকার ভিত্তিক গণপরিবহন সিস্টেম বা র‍্যাপিড বাস ট্রানজিট চালু করা কঠিন হয়ে যাবে। আর বন্দরের ভারী যানবাহন চলচলেও প্রচণ্ড বাধা সৃষ্টি করবে, যা পণ্য পরিবহন গতিশীলতায় স্থবিরতা সৃষ্টি করতে পারে।’

নিচের মূল সড়কে সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কার্যকর হবে না উল্লেখ করে সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘যে এক্সপ্রেসওয়েতে গণপরিবহন (বাস) চলাচল করতে পারবে না সে এক্সপ্রেসওয়েতে নগর যাতায়াতের শতকরা সর্বাধিক ৫ শতাংশ মানুষ কিছুটা সময়ের উপকার পাবে। উন্নয়নের নামে এই সামান্য গোষ্ঠী স্বার্থের সুবিধার জন্য অপরিকল্পিতভাবে র‍্যাম্প নামিয়ে নগরের ৯৫ শতাংশ নাগরিকের চলাচলকে আরো সংঘাতময় করা গ্রহণযোগ্য নয়।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান, প্রকৌশলী এবিএমএ বাসেত, স্থপতি আহমেদ জিন্নুর চৌধুরী, প্রফেসর ড. নাজিম উদ্দিন, প্রফেসর ড. শফিক হায়দার চৌধুরী, প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম, পরিবেশবিদ তসলিমা মুনা প্রমুখ।

Advertisement
spot_img