চট্টগ্রামে নেতাকর্মীদের কর্মশালায় প্রশ্নোত্তর পর্বে তারেক রহমান

আমরা নিশ্চিতের চেষ্টা করবো প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা দিতে

চট্টগ্রামে নেতাকর্মীদের কর্মশালায় প্রশ্নোত্তর পর্বে তারেক রহমান

57

তারেক রহমান বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা ও বিচার, পরোয়ানা ছাড়াই গণগ্রেপ্তার এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে যে ভয়ের সংস্কৃতি গত ১৬ বছরে গড়ে উঠেছিল জনগণের ভোটে নির্বাচিত বিএনপি সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে সেটি নির্মূল করার জন্য। জাতিসংঘ প্রণীত মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র অনুসারে আমরা নিশ্চিতের চেষ্টা করবো প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা।

Advertisement
spot_img

তিনি বলেন ‘আমাদের লক্ষ্য এমন একটি রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা, যেখানে ইউটিউব, ফেইসবুক, ও অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিজেদের ভাবনা প্রকাশের কারণে, কিংবা প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিষয়ে মন্তব্যের দায়ে, কাউকে হেনস্তা করা হবে না।’

ক্ষমতায় আসলে অবৈধভাবে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ‘বিএনপির রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা’ নিয়ে নেতাকর্মীদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশ্নোত্তর পর্বে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

আমি চট্টগ্রামবাসীকে ধন্যবাদ জানাই এজন্য যে চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা করা হয়ে ছিল, সে চট্টগ্রামে শহীদ হন জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন ,৩১ দফা এটা ছিল আগের ২৭ দফা পরে এটাকে ৩১ দফা করা হয়েছে। ৩১ দফা দেশের সব দল গুলোর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।চট্টগ্রামে ৮৫৯ উপস্থিতির মধ্যে রেখে দিলে হবে না টা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। বিএনপি দেশ পরিচালনা করতে চায় জনগণের মতামত নিয়ে। কারণ জনগণের সকল ক্ষমতার উৎস।
তিনি বলেন,কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আপনাদের বলেছেন জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে কাজ হবে পৌরসভা ও ইউনিয়নের নেতাদেরকে ৩১ দফা বুঝানো।
তিনি বলেন ৫ তারিখের পর অনেক নেতা কর্মীর মনে একটি ফিলিং আমরা ক্ষমতায় গিয়েছি আমরা ক্ষমতা থেকে এখনো অনেক দূরে।বিভিন্ন অপকর্ম করতে ঘিয়ে চট্টগ্রামে অনেক নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।একানে কেউ পার পাবেনা।
বিএনপি’র প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির উদ্যোগে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি শীর্ষক চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা ২০২৪।চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্টিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চট্টগ্রোাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহবুবে রহমান শামীম ।

‘বর্তমানে দেশে আলোচিত প্রায় সব সংস্কার প্রস্তাবই আমাদের ৩১ দফায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমি সংস্কারের উদ্দেশ্য বলতে সেটিই বুঝি, যে সংস্কারের মাধ্যমে সংবিধানের কয়েকটি বাক্য নয়, বরং মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে; অর্থাৎ একজন মানুষের রোজগারের ব্যবস্থা হবে, তার ও পরিবারের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা ও সঞ্চয় নিশ্চিত হবে।’

এ প্রশ্নের উত্তরে তারেক রহমান বলেন, ‘দুর্নীতির মাধ্যমে ১৫ বছরে আমাদের দেশের ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে অবৈধভাবে পাচার হয়ে গেছে। ১৫ দিনের মধ্যেই তা আবিস্কার করতে পেরেছে। এর মানে ভেতরে আরো অনেক কিছু আছে। যদি ভেতরে আরো গভীরভাবে…তাহলে দেখা যাবে দেশের কয়েক বছরের বাজেটের টাকার সমান চলে গেছে। পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। মানি লন্ডারিংয়ের টাকা আন্তর্জাতিক ফোরামের সঙ্গে একটা সামঞ্জ্যের মাধ্যমে দেশের টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য একটা ব্যবস্থা করতে হবে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার লোকাল ফোরামের মাধ্যমে কথাবার্তা শুরু করেছে। আমরা দেখবো, অবজারভ করবো, তারা সেটা কতটুকু করতে পারেন। যদি পারেন তাহলে ভালো, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাবো। আর কি পারেন সেটা দেখে জনগণ যদি আমাদের ভোট দিয়ে দেশ সেবার সুযোগ দেন; তাহলে বিভিন্ন ফোরামের মাধ্যমে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বন্দোবস্ত করেই ছাড়বো।

এর সঙ্গে যোগ করে তারেক রহমান আরো বলেন, ‘অবশ্যই আমরা আন্তর্জাতিক ফোরামের সহযোগিতা নিব। তবে এর বাইরে আন্তর্জাতিকভাবে যে প্রাইভেট সংস্থাগুলো আছে; তাদের সাথে আমরা কথা বলবো। আমাদের দেশের সম্পদ (পাচার হওয়া টাকা) দেশের মানুষের সম্পদ যে এনে দিতে পারবে; আমরা তার সাথেই কথা বলবো-বসবো।’

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদুল উল্লাহ বলেন— ‘গত ১৫ বছরে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে দেশের যে টাকাগুলো বিদেশে পাচার হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে এগুলো আনার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?’

খাগড়াছড়ি জেলা মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক শারমিন আক্তার জানতে চান— বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফার প্রথমেই ছিল ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা।’ তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও বিভিন্ন কমিশন গঠন করেছেন এবং সংবিধান সংস্কার কমিটি করেছে। সেই কমিটির সুপারিশ যদি বিএনপির সঙ্গে কনফ্লিক্ট (সাংঘর্ষিক) হয় সেই ক্ষেত্রে কি করা হবে? বা তাদের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) যে সুপারিশ; সেটা বিএনপি গ্রহণ করবে কিনা! করলেও কতটুকু করবো?

এ প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশ এবং দেশের মানুষের জন্যই আমরা (বিএনপি) ৩১ দফা দিয়েছে। প্রথমে যখন শুধু বিএনপির পক্ষ থেকে ছিল তখন ২৭ দফা; পরবর্তীতে যে দলগুলো ছিল সবার সঙ্গে আলোচনা করে সবার মতামতের ভিত্তিতে ৩১ দফা দেওয়া হয়েছে। তাই মনে করি না, এর বাইরে কোনো কিছু আছে। এরপরও যদি বেটার কোনো দফা আসে; কোনো একটা দফার ক্ষেত্রে বেটার কোনো কিছু ঘটে এবং যেটি জনগণের ইচ্ছার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, দেশের স্বার্থে সামঞ্জস্যপূর্ণ আমরা অবশ্যই সেটিকে গ্রহণ করবো।’

ফেনী জেলা তাঁতীদলের আহ্বায়ক সরোয়ার জাহান শ্রাবণ জানতে চান— ‘বাংলাদেশের তাঁত শিল্প ফেনী অঞ্চলে নেই, আগামী রাষ্ট্র ক্ষমতায় বিএনপি এলে তাঁত শিল্পের জন্য পদক্ষেপ নিবে কিনা?

তারেক রহমান বলেছেন, ‘তাঁত শিল্প শুধু শিল্প নয়; এটি আমাদের ঐতিহ্য। তাঁত শিল্পের সঙ্গে বহু মানুষ জড়িত; তাদের পরিবারের জীবীকা আছে। তাঁত শিল্পের বিষয়ে যেটা হয়েছে— সুতার দাম বেড়েছে, ক্যামিকেলের দাম বেড়েছে, কিন্তু সেভাবে পণ্যের দাম বাড়েনি। আরেকটা সমস্যা আছে— মানুষের রুচির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিভিন্ন নতুন নতুন ডিজাইন এসেছে। কাপড়ের মিক্সড রয়েছে। আমরা যেটা উদ্যোগ গ্রহণ করবো— বিভিন্ন উপায় বের করে সুতার দামগুলো কমানোর চেষ্টা করা হবে। একইভাবে ক্যামিকেলের দাম কমানোর চেষ্টা করা হবে এবং একইসময়ে যাঁরা তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে তাদের জন্য ট্রেনিং ক্যাম্পের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। যাতে তাঁরা নতুন নতুন ডিজাইন তৈরি করতে পারে। আর এ ডিজাইনের মাধ্যমে মার্কেটে তাদের পণ্য বৃদ্ধি করতে সুবিধা হবে। এ পরিকল্পনাগুলো মাথায় রয়েছে। একইসঙ্গে তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাংকিং সহযোগিতাও দরকার। তাই চেষ্টা করবো সেই সহযোগিতা করার। যেহেতু তাঁত শিল্প আমাদের ঐতিহ্য; তাই চেষ্টা থাকবে কিভাবে আমাদের এ ঐতিহ্যকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা যায়।’

২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাবস্থায় উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য একটি প্রকল্প ছিল। কিন্তু ফ্যাসিবাদি সরকার সেই প্রকল্পটি বাতিল করেছে। আবার যদি বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে পারলে বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সন্দ্বীপ-হাতিয়াসহ উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য এ প্রকল্পটি পুনরায় আরম্ভ হবে কিনা— জানতে চেয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন।

তাঁর এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘যে কাজটি (প্রকল্প) করলে জনগণ উপকৃত হবে। সেই কাজটি যদি তারা বন্ধ করে থাকে তাহলে সেই কাজটি ইনশাআল্লাহ আমরা শুরু করে দিব।

তারেক রহমান বলেন,শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সীমাহীন খুন, হামলা, ধর্ষণ, ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়লেও, দলীয়ভাবে তাদের শাস্তি দেওয়ার কোনো ইতিহাস নেই। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে দেখা যায়, দেড় হাজারেরও অধিক গণতন্ত্রকামী মানুষকে গণঅভ্যুত্থানে হত্যা করার পরেও, আওয়ামী লীগের কোনো নেতার কোনো অনুতাপ, অনুশোচনা বা আত্মসমালোচনার নজির নেই।

Advertisement
spot_img