চবিতে আবুল মনসুর আহমদের রাষ্ট্রচিন্তা: প্রেক্ষাপট গণঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক সভা

90

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আবুল মনসুর আহমদের রাষ্ট্রচিন্তা: প্রেক্ষাপট গণঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রচিন্তা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এই সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক ও রাষ্ট্রচিন্তক সলিমুল্লাহ খান।

Advertisement
spot_img

সোমবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মিলনায়তনে দুপুর ২.৩০ থেকে সন্ধ্যা চলে এই সভা। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ, এ্যাডভোকেট আরিফ খান, আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক, কবি ইমরান মাহফুজ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাষ্ট্রচিন্তা চবির উপদেষ্টা আর রাজী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

সভায় সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে আবুল মনসুর কিছু আপত্তি তুলে ধরেছিলেন তার বইয়ে। এই গণঅভ্যুত্থানের পর সেগুলো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠৈছে। শেখ মুজিব আবুল মনসুরকে সংবিধান সংশোধনের জন্য আহ্বান করেছিলেন। শেখ মুজিব কথা দিতেন কিন্ত কথা রাখতেন না। সংবিধান সংশোধনের কথাও তিনি শতভাগ প্রত্যাখান করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান অজ্ঞান অবস্থায় আছে। যেটিতে বলা হয়েছে সকল ক্ষমতার উৎস জনগন, এটি একটি বড় জোচ্চুরি। এখানে হওয়া উচিত ছিল জনগন সকল ক্ষমতার মালিক। আর এটি না হওয়ার কারনেই প্রতিনিধিত্বের রাজনীতি হচ্ছে। সরকার হয়েছে পাওয়ার অব এটর্নি হয়ে হয়ে গেছে। সকল ক্ষমতার উৎস নয়, মালিক জনগন। যেন সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তাকে সরিয়ে দেওয়া যায় এমন সুযোগও থাকে।’

শেখ হাসিনার নৈতিক মৃত্যুদণ্ড হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের সাত নং ধারায় আওয়ামীলীগ সরকার একটি সংশোধন এনেছে, ‘যে কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে চাইলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড’এই শাস্তি হাসিনারই প্রাপ্য। সে যেখানেই পালিয়ে থাকুক না কেন তার নৈতিক মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।’

কবি ইমরান মাহফুজ বলেন, ‘ আবুল মনসুরের লেখায় উঠে এসেছে গনতন্ত্রে আমাদের শিক্ষকরা ফেইল করেছে বলেই আমাদের গণতন্ত্র ফেইল করছে । আবুল মনসুর বলেছেন গনতান্ত্রিক সরকার সঠিক পথে চলতে পারে যদি তার নাগরিক সোচ্চার হয়। আমরা যদি সোচ্চার না হই তাহলে শুধুমাত্র গণজাগরণ বা ২৪ আবু সাঈদের জীবন দেয়া পরিবর্তন এনে দিতে পারবে না।’

এ্যাডভোকেট আরিফ খান বলেন,” দেশে অনেকগুলো গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে কথা বলতে চাই। ৭১ ও ২৪’র গণঅভ্যুত্থান দুটোই বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিলো। দুটোই গণসম্মতিতে হয়েছিলো। যেকোনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গণ সম্মতি প্রয়োজন হয়। গণসম্মতি ছাড়া রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। আমাদের রাষ্ট্র বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে দখল হয়ে গিয়েছিল। আমাদের তরুণরা সেখান থেকে দখলমুক্ত করেছে। ”

আবুল মনসুর আহমেদকে নিয়ে বলেন, ‘ আবুল মনসুর আহমেদ তাঁর রাষ্ট্রচিন্তায় সকলের ধর্মের স্বাধীনতা থাকতে হবে বলেছেন। ৭১ ও ২৪ এ আমাদের সংগ্রাম ছিলো বৈষম্যের বিরুদ্ধে। আবুল মনসুর আহমেদও সবসময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে কাজ করে গেছেন। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন আইকনিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ত্ব। বাঙালি মুসলমানদের প্রতিষ্ঠিত করতে সবসময় কাজ করে গেছেন এই রাজনৈতিক বিজ্ঞানী।’

অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনসহ আমাদের ইতিহাসে যে বড় বড় রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য আন্দোলন হয়েছে সেসব আন্দোলনে এলিট শ্রেণীরা অংশ নেয়নি, অংশ নিয়েছে গণমানুষ। আবুল মনসুর এলিট শ্রেণী হলেও তিনি এসব আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিলেন। ‘

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘রাষ্ট্রচিন্তাকে ধন্যবাদ খুবই সুন্দর বিষয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি করেছে। আলোচনায় উঠে এসেছে এখনও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু হল বন্ধ আছে। তবে আমাদের গত প্রশাসনের দুর্নীতির ফলে আমরা এখনও শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলো খুলে দিতে পারিনি। তবে আমরা স্থির থাকিনি। এই প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। ‘

এছাড়াও অনুষ্ঠান আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য তানভীন কায়েস। ##

Advertisement
spot_img