মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এলাকামুখী, যে সতর্ক বার্তা বিএনপির

57
নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা না এলেও বসে নেই বিএনপি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন টার্গেট করে ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা নিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা এখন এলাকামুখী। ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দলের ভবিষ্যৎ করণীয়, প্রতিশ্রুতিসহ রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফার বিষয়গুলো। সাংগঠনিক এসব কর্মসূচির মাধ্যমে সারা দেশে প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নিচ্ছেন নির্বাচনি প্রস্তুতি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে। অনেক এলাকায় আবার তিন থেকে চারজন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা জনকল্যাণে চষে বেড়াচ্ছেন। এ নিয়ে ওইসব এলাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে গ্রুপিং-দ্বন্দ্বও শুরু হয়েছে। ঘটেছে অনুসারীদের মধ্যে মারামারির মতো ঘটনাও। অবশ্য বিএনপির কেন্দ্র থেকে এখনই নির্বাচনি কোনো প্রচার না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ব্যানার-পোস্টার বা বিলবোর্ড সরানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে নেতারা বলছেন, প্রতিটি এলাকায় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা নির্বাচনি আবহ তৈরি হয়েছে। গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জণগণ ভোট দিতে পারেননি। তাই তারা এখন ভোটের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন।

নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চান। নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের ভোটে যেই সরকার গঠন করুক না কেন, মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করাই বিএনপির টার্গেট। এ লক্ষ্যে সারা দেশে সব ধরনের জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের যে করেই হোক সাধারণ মানুষের মন জয় ও ভালোবাসা অর্জনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলের হাইকমান্ড থেকে। নেওয়া হচ্ছে নানারকমের ইতিবাচক সাংগঠনিক কর্মসূচির উদ্যোগ। যারা নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে রাজপথে এতদিন সক্রিয় ছিলেন, ভবিষ্যতের জন্য দলীয় হাইকমান্ড প্রাধান্য দিচ্ছেন তাদের। তবে এখন নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে তৃণমূল কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে। তাদের সমস্যা দেখতে এবং জনগণের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করতে। দল দেখছে কারা দুঃসময়ে কাজ করেছে। অবশ্যই নির্বাচনের জন্য আত্মত্যাগ, ১৭ বছরের ভূমিকা, জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক দক্ষতা-এসব বিষয় বিবেচনায় আসবে। নেতারা আরও বলেন, বড় দলে প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী থাকাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে গ্রুপিংও থাকতে পারে। তবে তা যেন দলের ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

Advertisement
spot_img

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, গণতান্ত্রিক দল হিসাবে নির্বাচনকেন্দ্রিক একটি প্রস্তুতি সবসময়ই দলের থাকে এবং সে অনুযায়ীই এখন দলীয় নেতারা কাজ করছেন। নির্বাচনের প্রস্তুতি সবসময়ই আমাদের ছিল এবং এখনো আছে। তাছাড়া বিগত ১৬ বছরের বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার আন্দোলনের মাধ্যমেই বিএনপির নির্বাচনি প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়ে আছে।

দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, বিএনপির যে ইতিবাচক চিন্তা বা কাজ, তাতে মানুষ খুবই খুশি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন একটা শাসনব্যবস্থার চিন্তা আমরা করছি। যে বার্তা নির্বাচনি এলাকায় পৌঁছে দিচ্ছি। ৩১ দফায় আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, যা জনগণের কাছে আবার উল্লেখ করছি। এটা জনগণও গ্রহণ করছে, ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন। ফ্যাসিবাদী শাসক পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে। এ সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেওয়ায় মানুষের মধ্য একটা হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। মানুষ চায় একটা নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করবে। মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে।

এলাকামুখী নেতারা : সরকার থেকে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা না এলেও এলাকামুখী বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। দলটির হাইকমান্ডের নির্দেশনায় তারা জনসংযোগ, জনস্বার্থে কর্মসূচি পালন করছেন। পাশাপাশি নানা সামাজিক অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছেন। বিএনপি ইতিবাচক কর্মকাণ্ড ও চিন্তাভাবনা তুলে ধরছে সাধারণ মানুষের মাঝে। বিএনপির যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, নির্বাচনি এলাকা মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের মানুষের সঙ্গে আমার একটা আত্মার সম্পর্ক। যে কারণে সবসময়ই এলাকার দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ সুখ-দুঃখে পাশে পেয়েছেন, এখনো পাশে থাকার চেষ্টা করি। বিএনপি একটি গণমানুষের দল। দেশনায়ক তারেক রহমান ইতোমধ্যে দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। তার নির্দেশে জনসম্পৃক্ত সব ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি। জনগণের মনোভাব হচ্ছে তারা দ্রুত নির্বাচন চান, দেশকে স্থিতিশীল দেখতে চান।

Advertisement
spot_img