‘আওয়ামী লীগ উকিÑঝুঁকি মারছে’ মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল শনিবার বিকালে নগরের কাজির দেউড়ি এলাকায় বিএনপির র্যালী পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমাদের ঐক্য নষ্ট করা যাবে না। আওয়ামী লীগ উকি-ঝুঁকি মারছে। ফ্যাসিস্টরা উকি-ঝুঁকি মারছে। এই ঐক্য ভাঙা যাবে না, জাতীয় ঐক্য। তারেক রহমান ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, অটুট থাকতে হবে। অটুট থেকে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। নির্বাচিত সংসদের দিকে যেতে হবে। তারা জনগনের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে শনিবার দুপুর ২ টায় নগরীর আলমাসের সামনে র্যালি পূর্বক এক সমাবেশ অনুষ্টিত হয়।চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লার সভাপতিত্বে সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান এর পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে রহমান শামীম,বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য গোলাম আকবর খন্দকার,এসএম ফজলুল হক,চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক ,সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন,চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিষ্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন,আবুল হাসেম বক্কর,হারুন আর রশিদ,সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া বক্তব্য রাখেন এমএ হালিম।উপস্থিত ছিলেন মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতৃবিন্দ।
দুপুর থেকে নগরী জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশ ও বর্ণাঢ্য র্যালি যোগদেয়।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরো বলেন, রাজনীতি বদলে গেছে। যারা সুশৃঙ্খল তাদের জন্য রাজনীতি। চাঁদাবাজ, দখলবাজ, ভূমিদস্যু, এদের জায়গা বিএনপিতে হবে না।
৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার সক্রিয় অংশগ্রহণে বাংলাদেশের মানুষ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিলেন। বাংলাদেশে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল, আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল। জনগন অধিকার কেড়ে নিয়ে একদলীয় বাকশাল, সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া, হাজার হাজার হত্যাকান্ড, ভয়ভীতির পরিবেশ, দূবিক্ষের দেশে পরিণত হয়েছিল।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মাধ্যমে, মুক্তবাজার অর্থনীতির বাংলাদেশ, আইনের শাসনের বাংলাদেশ, জীবনের নিরাপত্তার বাংলাদেশ, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সেই ধারা অব্যাহত রেখেছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সৈরচারের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লেগে থেকে পতন ঘটিয়েছে। শুধু বহুদলীয় নয়, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি করেছিলেন।
গোলাম আকবর খন্দকার বলেন, আওয়ামী লীগের দেড় যুগের শাসনামলে দিবসটি স্বাচ্ছন্দ্যে উদযাপন করতে পারেনি বিএনপি। তাই ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি পুনর্বহাল করতে হবে। আজ সকাল এগারোটায় নগরীর বিপ্লব উদ্যানে শহীদ জিয়ার স্মৃতি বেদিতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসএস ফজলুল হক বলেন, ৭ই নভেম্বর ১৯৭৫ পটপরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রভাবমুক্ত হয়ে শক্তিশালী সত্তা লাভ করে। গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়, এই দিন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, সেই একই চেতনা বুকে ধারণ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত করা, স্বাধীনতার সুফল তথা অর্থনৈতিক মুক্তি, শান্তি-শৃঙ্খলা, সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
প্রধান বক্তা মাহবুবে রহমান শামীম বলেন, ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস জাতির ঐক্যের দিন। আওয়ামীলীগ বিগত ১৭ বছর নতুন প্রজন্মকে ৭ নভেম্বর সম্পর্কে জানতে দেয়নি। এই চেতনাকে আবার পুনঃস্থাপিত করতে হবে। এখন সুযোগ এসেছে, শহীদ জিয়া ও বিপ্লব সংহতি দিবস সম্বন্ধে নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে।
তিনি বলেন,মানুষের বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে আধিপত্যবাদ, একনায়কতন্ত্র, একদলীয় শাসন, জনজীবনের বিশৃঙ্খলাসহ তখনকার বিরাজমান নৈরাজ্যের অবসান ঘটান। শহীদ জিয়া আমাদের মাঝে না থাকলেও আমরা শহীদ জিয়ার আদর্শ ধারণ করে আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমান এর নেতৃত্বে দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই করছি। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিষ্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর একটি সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়। নভেম্বর বিপ্লব নতুন করে বাংলাদেশকে বিনির্মাণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। ৭ নভেম্বরের পর শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দায়িত্ব না নিলে এ দেশের ভাগ্যে কি হতো বলা যায় না। সেদিন জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিভক্ত জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। শহীদ জিয়া অন্ধকার থেকে দেশকে আলোতে নিয়ে এসেছিলেন। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন হয়, মুক্ত অর্থনীতি, মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা হয়। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ৭ নভেম্বর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে বাংলাদেশ আধিপত্যবাদ থেকে বেরিয়ে এসেছিল।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে নগরীর আলমাসের সামনে থেকে শুরু হয়ে বর্ণাঢ্য র্যালিটি কাজিরদেউরী, লাভ রেইন,এনায়েত বাজার হয়ে নিউমার্কেট চত্তরে গিয়ে শেষ হয়।