রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে আয়োজিত ‘অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের গর্বিত সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে’ এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর এ সভার আয়োজন করে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা জনতার দাবি। গুলি করে ছাত্র মারার পর আওয়ামী লীগ আবার এ দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পাবে কিনা তা জনতার আদালতে সিদ্ধান্ত হবে। ট্রাইবুনালে একটা সংশোধনী আনার কথা শুনছি। সংগঠন হিসেবে, রাজনৈতিক দল হিসেবে যদি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত হয় তাহলে রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও দলের বিচার হবে। সেই সংশোধনী যদি আইনে আনে এবং ট্রাইবুনালে যদি বিচার হয় সেই বিচারের ফলাফল কী হয় তখন দেখা যাবে। আমরা এখন কোনো ফয়সালা দিতে চাই না। গণহত্যাকারী কোনো দল বাংলাদেশের রাজনীতি করতে পারবে কিনা তা আদালত ও দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে। আমাদের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নেই। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত সারাদেশে প্রশংসিত হয়েছে, সবাই গ্রহণ করেছে।
সভায় জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আগস্ট বিপ্লবের শহিদরা জাতীয় বীর। দেশ ও জাতির জন্য তাদের এই আত্মত্যাগের কথা কোনোভাবেই মুছে ফেলা যাবে না। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের জন্য যথাযথ সম্মানের ব্যবস্থা করতে হবে।
নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গণহত্যার নেত্রী ও তাদের দোসররা ভারতে পালিয়ে গেছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শুধু ব্যক্তির বিচার করলেই চলবে না, বরং দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।
সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমাদের আগস্ট বিপ্লবের শহিদদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তারা দুনিয়া ও আখেরাতে পুরস্কৃত হবেন।
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার নির্দেশে নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। তাই তাদের বিচার নিশ্চিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াত আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ও অসংখ্য আলেম-উলামাকে হত্যা এবং আয়নাঘরের মাধ্যমে জাতীয় নেতাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। তিনি শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধ হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং তাদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানান।
মতবিনিময় সভায় কূটনৈতিক কোরের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান, বিভিন্ন সামাজিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতা এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং অর্ধ সহস্রাধিক হাত-পা হারানো ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
তিনটি অধিবেশনে এই আয়োজন ছিল। রোববার সকাল ১০টায় শুরু হয়ে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত শহিদ পরিবারের সদস্য ও জাতীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করা হয়। বেলা ৩টা থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন ১২ দলীয় জোট প্রধান, সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী ড. রেদোয়ান আহমদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, জাতীয় গণতান্ত্রিক দলের (জাগপা) মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, গণঅধিকার পরিষদের (নুর) সদস্য সচিব রাশেদ খান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন।