শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমীতে মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। প্রতিবারের মতো রাজশাহীতেও এবারও এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকালে নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় ত্রিনয়নী মণ্ডপে এই পূজা অর্চনা হয়।
এ বছর দেবীর আসনে বসেছিল নগরীর সাহেববাজার এলাকার অমিত জয়সোয়াল ও চৈতী চৌধুরী চার বছরের কন্যা অভিলাশা জয়সোয়াল। সকালে শঙ্খ, ঘণ্টা আর উলু ধ্বনির মধ্যদিয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে দুর্গা দেবীকে কুমারী রূপে অর্ঘ্য প্রদান করা হয়।
পূজা শুরুর আগে তাকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে নানা অলঙ্কার ও ফুলের মালা দিয়ে নিপুণভাবে সাজিয়ে দেবীর আসনে বসানো হয় অভিলাশাকে। এর আগে মন্ত্রোচ্চারণ, ফুল ও বেলপাতার আশীর্বাদ পৌঁছে দেয়া হয় ভক্তদের কাছে। পূজায় মন্ত্র পাঠ করেন দিননাথ চক্রবর্তী।
ত্রিনয়নী সংঘের সাধারণ সম্পাদক অভি কুমার দাস জানান, কুমারী পূজার মাধ্যমে নারী জাতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। আমরা প্রতি বছর এই মন্দিরে কুমারী পূজা করে থাকি। এবারও এই কুমারী পূজা করা হয়েছে।
সনাতন ধর্ম মতে, দেবী মাতৃরূপে ভক্তদের মধ্যে আর্বিভুত হন। তিনি যেমন দুষ্টের দমন করেন, তেমনি মাতৃরূপে ভক্তের পালনও করেন। সেই ধারণাকে ধারণ করে কুমারী পূজার আবির্ভাব। পুরাণ মতে, মুনি ঋষিরা প্রকৃতিকে নারীর সমান মনে করতেন। তাই কুমারী পূজা মাধ্যমে প্রকৃতিকে পূজা করতেন তারা। কারণ, তারা মনে করতেন মানুষের মধ্যেই রয়েছে ঈশ্বর।
সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী, কোলাসুর কে বধ করার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় কুমারী পূজার। গল্পে বর্ণিত রয়েছে যে, কোলাসুর যখন স্বর্গ ও মর্ত্য অধিকার করেন, তখন কোলাসুর এর থেকে মুক্তি পেতে দেবতাগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। দেবতাগণের ডাকে সাড়া দিয়ে দেবী কুমারী রূপে কোলাসুর কে বধ করেন। এর থেকে মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়।
সনাতন ধর্মে, সম্মানের দিক থেকে নারীকে শ্রেষ্ঠ আসনে বসানো হয়েছে। তাই শাস্ত্রকাররা নারীকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে এই পূজা করার কথা বলেছেন।
এছাড়াও এদিন রাজশাহীর প্রতিটা মন্দিরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুষ্পাঞ্জলি দেয়া হয়েছে। এদিন বিকেল সাড়ে চারটায় অনুষ্ঠিত হয়েছে সন্ধি পূজা। মহাঅষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলিতে মণ্ডপগুলোতে ভক্ত, পূজারী ও দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে।
রাজশাহীতে এ বছর ৪১২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে জেলায় ৩৩৫টি ও নগরে ৭৭টি মণ্ডপে এই পূজা হবে। আগের তুলনায় এবার ৫৬টি দুর্গাপূজার মণ্ডপ সংখ্যা কমেছে।