চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ছাত্রসমাজ আজ ইতিহাসের এক অগ্নিঝরা অধ্যায়ের সূচনা করেছে। তারা স্রেফ দাবি নয়, নিজেদের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে উপাচার্য নিয়োগের জন্য সর্বাত্মক লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। শনিবার (৫ অক্টোবর) রাত ১১টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওয়ারলেস মোড়ে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা “শাট ডাউন সিভাসু” কর্মসূচি ঘোষণা করে। এটি শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, বরং ছাত্রসমাজের স্বপ্ন, সাম্য এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে এক অভূতপূর্ব বিপ্লবী আহ্বান।
সিভাসুর ২৬তম ব্যাচের ডিভিএম শিক্ষার্থী মো: শাহারিয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, “আমাদের একটাই দাবি—আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী, গবেষণায় পারদর্শী এবং প্রশাসনিকভাবে দক্ষ শিক্ষক রয়েছেন। সিভাসুর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাদের অভ্যন্তরীণ শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। আমরা কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ বা ফ্যাসিবাদী রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে উপাচার্য হিসেবে মেনে নেব না।” তার এই বক্তব্য শিক্ষার্থীদের মনের কথা, তাদের আত্মার আহ্বান।
ফিশারিজ ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী সিফাতুল্লাহ মো. আফনান আরও কঠোরভাবে বলেন, “আমরা আজ থেকে ‘শাট ডাউন সিভাসু’ কর্মসূচি পালন করছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ স্থগিত থাকবে।” এটি স্পষ্টতই শিক্ষার্থীদের অটল সিদ্ধান্ত, যে কোনো মূল্যে তাদের দাবি আদায় করেই ছাড়বেন।
ভেটেরিনারি মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার তাসিন বলেন, “আমরা গত কয়েক দিন ধরে সাফ জানিয়ে আসছি যে, সিভাসুর উপাচার্য নিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্য থেকেই হতে হবে। আমরা বাইরের কোনো রাজনৈতিক নিয়োগ মেনে নেব না।” এই বক্তব্যেই শিক্ষার্থীদের দৃঢ় অবস্থান এবং দৃশ্যমান ক্ষোভ স্পষ্ট।
শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি গেটে তালা ঝোলানো, রবিবার সকাল ৮:৩০ টায় শুভ চত্বরে অবস্থান, সকাল ১০:০০ টায় সড়ক অবরোধ এবং অবস্থান ধর্মঘট। এছাড়াও, সাড়ে দশটায় প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে তারা তাদের দাবি জনসম্মুখে তুলে ধরবেন।
এই আন্দোলন শুধু সিভাসুর ভবিষ্যৎ নয়, বরং সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা এবং স্বাধীনতার প্রতি ছাত্রসমাজের বিশ্বাসের প্রতিফলন। শিক্ষার্থীদের এই জাগরণ প্রমাণ করে যে, অন্যায় এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি এখনো তাদের মাঝে অটুট রয়েছে।