সন্দ্বীপ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী মাহফুজুর রহমান (৪৮)। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় স্ত্রী দিলুয়ারা মাহফুজসহ (৪২) আসামি হয়েছেন তিনি। এই মামলায় কাগজে-কলমে পলাতক মাহফুজ। তবু তিনি নিয়মিত অফিস করছেন সন্দ্বীপে। এমনকি তিনি মামলার আসামি হওয়ার বিষয়টি জানাননি অফিস প্রধান সাব-রেজিস্ট্রারকে।
সরেজমিন বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) অভিযুক্ত মাহফুজকে সন্দ্বীপ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দেখা গেছে। তবে তিনি এদিন উচ্চ আদালত থেকে দুর্নীতির মামলায় জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান।
দুদক জানায়, গত ২ সেপ্টেম্বর মামলাটি করেন সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী। মামলায় অভিযুক্ত মাহফুজুর রহমান চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা উত্তর দেয়াং মোহাম্মদনগর গ্রামের এখলাসুর রহমানের ছেলে বলে উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মাহফুজ দম্পতির এক কোটি ৭ লাখ ২ হাজার ৭৪৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া তারা দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ২১ টাকা মুল্যের সম্পদ থাকার তথ্য গোপন করেছেন। মামলায় দুদক আইনের ২৬(২), ২৭(১) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে।
দুদক জানায়, ২০২২ সালে দুদকে জমা হওয়া এক অভিযোগ অনুসন্ধান করে মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা পান অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। এরপর কমিশনের নির্দেশে ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন দিলুয়ারা মাহফুজ। পরে তার সম্পদ বিবরণী যাচাই করে সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপনের সত্যতা পায় দুদক। দিলুয়ারা মাহফুজের এসব অবৈধ সম্পদ অর্জনে তার স্বামী মাহফুজুর রহমান সহযোগিতা করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে দুদকের মামলায় আসামি হওয়া মাহফুজুর রহমান বলেন, একটি বেনামি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক তদন্ত করেছে। আমার স্ত্রীকে সম্পদগুলো দান করা হয়েছিল। কিন্তু দুদক কর্মকর্তারা সেটি বুঝতে চাননি। তারা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার প্রক্রিয়া করছি। পাশাপাশি মামলাটিও আইনিপ্রক্রিয়ায় আমরা মোকাবিলা করব।
এ বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার (খণ্ডকালীন) মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, মাহফুজ আমার অফিসে নিয়মিত অফিস করছেন। বুধবারও তিনি অফিস করেছেন। তিনি মামলার আসামি হয়েছেন আমাকে জানাননি। পাশাপাশি দুদক থেকেও আমাদের জানানো হয়নি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ওই কর্মচারী দুর্নীতি করে টাকা অর্জন করেছেন এবং এগুলো এখন নিরাপদে ভোগ করতেছেন। এই ভোগ করতে দেওয়াও একধরনের অপরাধ। দুদকের উচিৎ ছিল তাকে কর্মস্থল থেকে গ্রেপ্তার করার এবং তার সম্পদ ক্রোকের আবেদন করার। কারও বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে মামলা রুজু হওয়া মানে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা তাকে গ্রেপ্তার করা উচিৎ অথবা অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীর জামিন নেওয়া দরকার ছিল। দুর্নীতি মামলায় পলাতক আসামিকে সরকারি দপ্তরে অফিস করতে দেওয়া বেআইনি। পাশাপাশি তিনি প্রশ্রয় পেয়ে এখন আরও বেশি দুর্নীতি করবেন।