সম্প্রতি চট্টগ্রামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ‘গানের তালে তালে হত্যার’ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য দিয়েছে চট্টগ্রাাম নগর পুলিশ। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ সাংবাদিকদের সামনে এ তথ্য তুলে ধরেন।
সরকার পতনের পর ভাসমান ব্যবসায়ী ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েল তৈরি করেন একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। সেটির নাম দেন ‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’। সেই গ্রুপের সদস্য ১৩০ জন। জুয়েল তার পরিচিত সার্কেলের মানুষদের ওই গ্রুপটিতে যুক্ত করেন।
ওই গ্রুপেই নিহত শাহাদাতকে পেটানোর আগে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ঘোষণা দেওয়া হয় জানিয়ে নগর পুলিশের মুখপাত্র তারেক আজিজ বলেন, ‘ভিকটিমকে বেঁধে পেটানোর সময় চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপে ভিডিওটা দেওয়া হয়। তখন গ্রুপে বলা হয় একজনকে ধরা হয়েছে যিনি মোবাইল চোর বা ছিনতাইকারী। তাকে মারতে হবে সবাই আসেন। এরপর একে একে দলে দলে গিয়ে তাকে পেটানো হয়।’
‘গ্রুপটি ছাত্র জনতার নাম দিয়ে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছিল। সরকার পতনের পরে ট্রাফিকিংয়ের জন্য পুলিশের অনুমোদনকৃত কোনো ট্রাফিক গ্রুপ ছিল না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে উদ্যোগী হয়ে অনেকে ট্রাফিকিংয়ে সহায়তা করেছে। কিন্তু তারা এই গ্রুপের সদস্য নয়।’— উল্লেখ করেন কাজী মো. তারেক আজিজ।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘মূলত ঘটনাটি ঘটেছিল গত ১৩ আগস্ট। ঘটনার পর ভিকটিম শাহাদাতের লাশ তারা প্রবর্তক মোড় এলাকায় ফেলে রাখে। পরে পুলিশ দেখতে পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে। এর আগে, কয়েক দফায় গান গেয়ে গেয়ে তাকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এরপর ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করে। মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ আসামিদের শনাক্তে কাজ শুরু করে এবং গতকাল টানা চার ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পৃথকভাবে ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
আসামিদের জিজ্ঞাবাদের বরাতে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার তিনজনসহ আনুমানিক ২০ জনের অধিক ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট আছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। পুলিশ বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবে, আসামিদের সাথে ভিকটিমের কোনো ধরনের পূর্ব পরিচয় ছিল না। ভিকটিমকে ছিনতাইকারী সন্দেহে মারধর করা হয়। এক দলের পর আরেক দল এসে এসে তাকে মারধর করে।’
এডিসি তারেক আজিজ বলেন, ‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপের এডমিন ফরহাদ আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বেই এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তবে সে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়। তবে বিভিন্ন ভাসমান ব্যবসা করে। আরেক আসামি যার বয়স ১৬, নাম সালমান। সে আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু। সেও কিন্তু ছাত্র নয়। সে ঘুরেফিরে বেড়ায় মূলত। আর আনিসুর রহমান ইফাত নামে যাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি সে চান্দগাঁও এলাকার একটি কলেজের ছাত্র।
গত শনিবার চট্টগ্রামে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে এক যুবককে মারধরের ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে, নীল রঙের গেঞ্জি এবং জিনস প্যান্ট পড়া এক যুবক ঢুলছেন। যার দুই হাত বেঁধে রাখা হয়েছে স্টিলের পাইপের সঙ্গে। আর এই যুবককে ঘিরে গোল হয়ে কয়েকজন যুবক চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গান গাইছে। ভিডিওতে কয়েকজন যুবকের হাতে লাঠিও দেখা গেছে। পরে মারধর করা ওই তরুণের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
গত ১৪ আগস্ট ষোলশহর ২নং গেট এলাকায় আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে এই ঘটনা ঘটে। এ সংক্রান্ত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসে গত শনিবার। হত্যার পর তার লাশ ফেলে রাখা হয়েছিল নগরের প্রবর্তক মোড়ে বেসরকারি একটি হাসপাতালের সামনে রাস্তায়।
ঘটনার পরের দিন পাঁচলাইশ থানায় ভিকটিমের বাবা মো. হারুন অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। শাহাদাত হোসেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভুঁইয়া বাড়ির মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন কোতোয়ালী থানাধীন বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে। তার স্ত্রী এখন অন্তঃসত্ত্বা। গত ১৩ আগস্ট সাগর নামে এক বন্ধুর কাছে পাওনা টাকা আনতে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন শাহাদাত।