গোটা বাংলা দেশে যখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন উত্তাল হয়ে উঠেছিল তখন তাসনিয়া ফারিণ কোথায় ছিলেন আর কিই বা করছিলেন।
দেশে এই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিয়ে শিল্পী সমাজ দুই ভাগে সুস্পষ্টরূপে আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় যে, তাসনিয়া ফারিণ এই দুই ব্যানারের কোনোটিতেই সরব ছিলেন না। না ঘরকা না ঘাটকা- এ অবস্থায় থেকে নিজেকে একেবারেই আড়ালে নিয়ে গিয়েছিলেন। যারা ওই আন্দোলনে নেতিবাচক ভূমিকায় ছিলেন তারা তো সবাই ইতিহাসের পৃষ্ঠায় আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। আর যারা ইতিবাচক অবস্থায় সক্রিয় ছিলেন তারা উঠেছেন বীরের তালিকায়। যিনি না ঘরকা, না ঘাটকা তার কী হবে?
অথচ সময়ের জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ। অভিনয়ে নৈপুণ্যতার কারণে দর্শক মহলে বেশ প্রশংসিত। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের কলকাতায়ও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তার তো একটা ইতিবাচক ভূমিকায় থাকা উচিত ছিল। তিনি তা করেননি। তবে কি তিনি তার কাজের ক্ষেত্রে দেশে বৃষ্টি হলে মস্কোতে ছাতা ধরেন? তাই কি যখন ছাত্র আন্দোলন বিজয়ের এক কদম আগে তখনই ছাতা ধরেন? এমনকি তিনি লেখেন, ‘এতগুলো দিন পার হয়ে যাওয়ার পর আমার কিছু বলা বা না বলাতে কিছু যায় আসে না। তবু মনে হচ্ছে আমার চুপ থাকাটাকে নিজের কাছে নিজের সহ্য হচ্ছে না।’
নিজ সময়কে বুঝতে না পারা এবং সেই অনুয়ায়ী ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হওয়া অভিনেত্রী হিসেবেও কনফিউজিং তাও বোঝা যায়। তাইতো তাকে আরও বলতে দেখা যায়, ‘আমি আমার নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নীরব ছিলাম। সাহসের অভাবে নীরব ছিলাম। নিজের স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে পারিনি। এ ব্যর্থতার দায় সম্পূর্ণ আমার। গা বাঁচিয়ে একটা দায়সারা বক্তব্য প্রদান করার চেয়ে আমার নীরব থাকাকে শ্রেয় মনে হয়েছে।’
শেষে ফারিণ এতদিন নীরব থাকার জন্য ক্ষমা চেয়ে বলেন, ‘আপনাদের মনে কষ্ট দিয়েছি। আমি ক্ষমাপ্রার্থী। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে চাই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হোক। কেউ পারলে আপনারাই পারবেন। ’
এই তাসনিয়া ফারিণ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আকাশছোঁয়া বিজয় উৎসবে থাকতে না পারার ব্যর্থতার সময়ে আরেকটি দুঃসংবাদ শুনলেন কলকাতার সিনেমা ‘প্রতীক্ষা’ থেকে বাদ পড়ছেন তিনি। অতনু ঘোষের ‘আরও এক পৃথিবী’ মুক্তির পর পশ্চিমবঙ্গেও প্রশংসিত হয়েছিলেন ফারিণ। তাতে সেখানে তার পরিচিতি বাড়ে, নতুন কাজের প্রস্তাবও আসে।
একপর্যায়ে অভিজিৎ সেনের পরিচালনায় ‘প্রতীক্ষা’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য চূড়ান্ত হয়েছিলেন ফারিণ। এতে তার সহশিল্পী হিসেবে থাকার কথা ছিল মিঠুন চক্রবর্তী ও দেবের। নভেম্বরে কলকাতা ও লন্ডনে হওয়ার কথা ছিল শুটিং। তবে সিনেমাটি আর করা হচ্ছে না ফারিণের। ভারতের ভিসা জটিলতায় মিঠুন-দেবের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ হাতছাড়া হলো অভিনেত্রীর।
যুক্তরাজ্যের ভিসা আগে থেকেই ছিল ফারিণের। কিন্তু প্রতীক্ষার মূল শুটিং যেখানে হবে, সেই ভারতের ভিসাই পাচ্ছিলেন না। গত সোমবার এক সাক্ষাৎকারে ফারিণ বলেন, ‘আওয়ামী সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ থেকে ভারতের ভিসা জটিলতা তৈরি হয়েছে। ভিসা পেতে সময় লাগছে। নির্ধারিত নভেম্বর মাসে শুটিং শুরু করা না গেলে সমস্যা। কারণ ওই সময় শুটিং শুরু করা না গেলে দেব ও মিঠুন চক্রবর্তীর সিডিউল পাওয়া যাবে না। কিন্তু সঠিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে ভিসা পাওয়াও অনিশ্চিত। এসব কারণে শেষ পর্যন্ত আর এ সিনেমায় কাজ করা হচ্ছে না। রোববার রাতে সিনেমার প্রযোজক অতনু রায় চৌধুরীর সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে আলাপ করার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ফারিণ জানান, এ সিনেমার জন্য এর মধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন তিনি। অনেক কাজের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছেন। অভিনেত্রী বলেন, ‘এ কাজটার জন্য আমি লম্বা একটা সিডিউল ফাঁকা রেখেছিলাম। কারণ আমি জানতাম, আমাকে যেতে হবে রিহার্সেলের জন্য। তাই অক্টোবর নভেম্বরের সিডিউলটা কাউকে দিইনি। …ভিসা পাব কি পাব না, এ নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। নতুন কাজও হাতে নিতে পারছিলাম না। এখন অন্তত সেই চিন্তা থেকে মুক্ত হলাম।’ অভিনেত্রী জানিয়েছেন, প্রতীক্ষা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পর ওই সিডিউলে আরেকটি ওয়েব ফিল্মে যুক্ত হয়েছেন। ভিসা জটিলতায় সিনেমা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত হলেও মন খারাপ করেননি ফারিণ। বলছেন, ‘এখানে তো আমার কোনো হাত নেই। হয়তো আমার জন্য আরও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।’ এর আগে ‘পাত্রী চাই’ নামে কলকাতার আরেকটি সিনেমায় অভিনয়ের কথা ছিল ফারিণের। প্রযোজক সংকটে সেটিও বাতিল হয়েছে।
এ বিষয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদক যোগাযোগ করেছিল প্রযোজকের সঙ্গে। প্রযোজক অতনু রায় চৌধুরী জানিয়েছেন, ভিসাঘটিত সমস্যার কারণে ভারতে কাজ করতে পারছেন না নায়িকা তাসনিয়া। আনন্দবাজার অনলাইন তার সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল। নায়িকা কোনো সাড়া দেননি। অতনু বলেন, আমাদের পাশাপাশি তাসনিয়াও ওর তরফ থেকে চেষ্টা করেছিল, যাতে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ পালাবদলের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এমনিতেই ভিসা পেতে অনেক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখন সেই প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে গেছে। ফলে তাসনিয়া আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারছে না। ওর মতো আমরাও অত্যন্ত ব্যথিত।