এস আলমের ২ লাখ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে জমা ২৬ হাজার কোটি

47

বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের ছয়টি ব্যাংকে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকার নগদ জমা থাকার সন্ধান পেয়েছে এনবিআর। এর বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এই গ্রুপ সব মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

Advertisement
spot_img

তবে ঋণের অর্থে সাইফুল আলম ও তাঁর পরিবার সিঙ্গাপুর, দুবাই, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল আলম, তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ভাই আবদুল্লাহ হাসানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের এবং তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ২৬ হাজার কোটি টাকা জমা রয়েছে। এর মধ্যে ভাই আবদুল্লাহ হাসানের ব্যাংক হিসাবে এখন নগদ জমা (স্থিতি) আছে ১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।

এছাড়া এস আলমের স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামেও কয়েক শ’ কোটি টাকা আছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল লিমিটেডের নামে তাদের মালিকানা ছয়টি ব্যাংকে বর্তমানে ৪ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা জমা আছে।

এই অর্থ এখন কেউ যাতে তুলে নিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য হিসাব জব্দের আদেশ দিতে যাচ্ছে কর বিভাগ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর অঞ্চল-১৫–এর একটি তদন্তে এই বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান মেলে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা এখন এই সম্পূর্ণ অর্থ কর বিভাগের আওতায় আনতে উদ্যোগ নিয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরই কর অঞ্চল-১৫ এস আলম পরিবারের ব্যাংক হিসাব তলব করে, যা সাধারণত কর ফাঁকি রোধের লক্ষ্যে করা হয়।

এস আলম গ্রুপের বিপুল অঙ্কের টাকা যে ছয়টি ব্যাংকে পাওয়া গেছে, সেগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ও আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ছাড়া বাকি চারটি সরাসরি এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ছিল।

 

আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এনবিআর এস আলম–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব তলব করে। এর মধ্যে ওই ছয়টি ব্যাংক থেকে পাঠানো তথ্যে দেখা গেছে, এস আলম পরিবারের সদস্য ও তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকগুলোতে জমা আছে (স্থিতি) ২৫ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। বাকি ব্যাংকের তথ্য যাচাই–বাছাই চলমান রয়েছে।

এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। ২০২০ সালের পর থেকে শুধু এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের হিসাবেই জমা হয়েছে ৮৩,৭০৬ কোটি টাকা। তদন্তে আরও জানা যায়, গত পাঁচ বছরে ছয়টি ব্যাংকের এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন হিসাবে জমা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা, যার বেশিরভাগই ঋণের টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরীর মতে, বিগত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যাংক লুটপাট হয়েছে। এস আলম গ্রুপ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বোর্ডগুলোর অনৈতিক চক্র এই লুটপাটে সহায়তা করেছে।

Advertisement
spot_img