৬৭৮ শিক্ষকের চাকরি যাচ্ছে ,ফেরত দিতে হবে বেতন-ভাতাও

61

সনদ জালিয়াতি করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়া ৬৭৮ শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে বেতন-ভাতা বাবদ নেয়া অর্থ ফেরত ও ফৌজদারি মামলাসহ সাত দফা শাস্তি কার্যকরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Advertisement
spot_img

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে সনদ জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার এক অফিস আদেশের এ নির্দেশ দেয়া হয়।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, জাল সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে। এখন সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব (অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা শাখা) মো. সেলিম শিকদারের সই করা ওই অফিস আদেশে বলা হয়, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর যাচাই-বাছাই করে ৬৭৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীর জাল সনদ শনাক্ত করেছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সনদ প্রদানকারী দপ্তরপ্রধান প্রতিনিধি সমন্বয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সনদের সত্যতা যাচাই করে জাল সনদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ অবস্থায় ৬৭৮ জন জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

আদেশে জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সাত দফা শাস্তি গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, এমপিও বন্ধ এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে চাকরিচ্যুত করা, গ্রহণ করা বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়া, ফৌজদারি অপরাধে মামলা করা, নিয়োগ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, অবসরপ্রাপ্তদের অবসর সুবিধাপ্রাপ্তি বাতিল, স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়াদের অর্থ অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আদায়, অবসর ভাতা/কল্যাণ ট্রাস্ট্রের ভাতা বন্ধ।

জানা গেছে, অভিযুক্ত ৬৭৮ জন শিক্ষকের কাছ থেকে ৩৫ কোটি ৫৬ হাজার ১১৮ টাকা ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। এই অর্থ তারা এমপিওভুক্ত হওয়ায় সরকারের কাছ থেকে বেতন-ভাতা বাবদ নিয়েছিলেন। ডিআইএর তদন্তের কালপর্ব ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর পর্যন্ত।

গত ৮ জানুয়ারি জাল সনদ নিয়ে শিক্ষকতা করছেন এমন ৬৭৮ শিক্ষকের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে জমা দেয় ডিআইএ। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে সই করেন ডিআইএর পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ্ মো. আজমতগীর।

ওই প্রতিবেদনের অনুলিপি থেকে জানা যায়, যে ৬৭৮ শিক্ষকের সনদ জাল পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে ৫১২ জন এনটিআরসিএর শিক্ষক নিবন্ধনের ভুয়া সনদ দেখিয়েছেন। অন্য জাল সনদগুলোর মধ্যে জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমির (নেকটার) ১৩৫টি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫টি, রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১টি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১টি, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১টি, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ১টি, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ১টি, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ১টি, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ২টি।

এ বিষয়ে মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, এমপিওভুক্ত করার আগে যথাযথভাবে সনদ যাচাই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মাউশির কোনো কর্মকর্তার গাফিলতি বা অসাধুতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জাল সনদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৫১২টি জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদের মধ্যে ৩২৩ জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত। এই শিক্ষকদের কাছ থেকে মোট ১৯ কোটি ৫২ লাখ ৭১ হাজার ৩৭০ টাকা আদায়ের সুপারিশ করা হয়েছে। বাকি ১৮৯ জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত নন, তাই তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের সুপারিশ করা হয়নি। এ ছাড়া তদন্তে ১৩৫টি জাল কম্পিউটার সনদের তথ্য পেয়েছে ডিআইএ। এর মধ্যে ১২৫ জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত, তাঁদের কাছ থেকে মোট ১৩ কোটি ৪০ লাখ ৫৫ হাজার ৪১ টাকা আদায়ের সুপারিশ করা হয়েছে। এর বাইরে আরও ৩১ জন শিক্ষকের বিএডসহ গ্রন্থাগার, সাচিবিকবিদ্যা ও অন্যান্য বিষয়ের সনদ জাল। তাঁদের কাছ থেকে ২ কোটি ৭ লাখ ২৯ হাজার ৭০৭ টাকা আদায় করা হবে। এনটিআরসিএর জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ সবচেয়ে বেশি দেখিয়েছেন রাজশাহী বিভাগের, ২৩০ জন এবং সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম বিভাগের, ২২ জন।

Advertisement
spot_img