মেডিকেলের প্রশ্নফাঁস, গ্রেপ্তার ১২ জনের মধ্যে সাতজনই চিকিৎসক

74

বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের আড়ালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এদের মধ্যে সাতজনই হলেন চিকিৎসক।

Advertisement
spot_img

রবিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী।

সিআইডি জানিয়েছে, চক্রটি ২০০১ সালে থেকে এখন পর্যন্ত ১০ বার মেডিকেলের প্রশ্নফাঁস করেছে। আর এর মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। এই অর্থ দিয়ে দেশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে চক্রের সদস্যরা। এমনকি অনেকে বিদেশেও অর্থপাচার করেছে।

গ্রেপ্তার ১২ জনের মধ্যে রয়েছেন- ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান (৫০), ডা. সোহেলী জামান (৪০), ডা. মোহাম্মদ আবু রায়হান, ডা. জেডএম সালেহীন শোভন (৪৮), ডা. মো. জোবায়দুর রহমান জনি (৩৮), ডা. জিল্লুর হাসান রনি (৩৭), ডা. ইমরুল কায়েস হিমেল (৩২), জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মুক্তার (৬৮), রওশন আলী হিমু (৪৫), আখতারুজ্জামান তুষার (৪৩), জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পি (৪৫) ও আব্দুল কুদ্দুস সরকার (৬৩)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে নয়টি মোবাইল, চারটি ল্যাপটপ, নগদ দুই লাখ ১১,০০০ টাকা, ১৫,১০০ বিদেশি মুদ্রা থাই বাথ, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৫টি চেক বই, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ও ভর্তির এডমিট কার্ড জব্দ করা হয়।

সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী জানান, পাবলিক পরীক্ষা এলেই প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই চক্রটি প্রশ্নফাঁস যেমন করে, তেমনি নানা কায়দায় গুজব ছড়িয়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করে। শিক্ষাখাতের ক্যানসার হিসেবে বিবেচিত এসব চক্রকে নির্মূল করতে পুলিশ কাজ করছে।

তিনি বলেন, “দেশের মেডিকেল কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষাতে নিয়মিত প্রশ্নফাঁস করে আসছে, এমন বিশাল এক সিন্ডিকেটের খোঁজ পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ। ২০২০ সালে মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা এক মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, বিগত প্রায় ১৬ বছরে হাজারো শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছে চক্রের অন্তত ৮০ জন সক্রিয় সদস্য। প্রশ্নফাঁস করে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন এমন শতাধিক শিক্ষার্থীর নামও পেয়েছে সিআইডি। এর মধ্যে অনেকে পাশ করে ডাক্তারও হয়েছেন।”

গ্রেপ্তার আসামিদেরকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দেওয়া বিপুল পরিমাণ ব্যাংকের চেক এবং অ্যাডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। এসব যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও চক্রের অন্যতম হোতা জসীম উদ্দিন ভূঁইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা তার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম রয়েছে। সেসব সদস্যদের ধরতে সিআইডির অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সিআইডি প্রধান বলেন, “২০২০ সালের প্রশ্নফাঁসের একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই চক্রের মূলহোতা জসীম উদ্দিন ও তার খালাতো ভাই মোহাম্মদ সালামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের দেওয়া জবানবন্দিতে এই ১২ জনের নাম উঠে আসে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ময়েজ উদ্দিন আহমেদ ও সোহেলী জামান দুইজনই চিকিৎসক এবং স্বামী স্ত্রী। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ছাত্র শিবিরে জড়ান ময়েজ উদ্দিন। তিনি এবং তার স্ত্রী ‘ফেইম’ নামক কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যান।”

এছাড়া বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ও সাবেক ছাত্রদলের রাজনীতি করা গ্রেপ্তার অন্য চিকিৎসকরা হলেন- সালেহীন শোভন, জোবাইদুর রহমান, জিল্লুর হাসান রনি ও জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী। তারা সবাই ২০০৫ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত।

Advertisement
spot_img