বিষয়টি নিয়ে সঙ্গে বহু পরীক্ষার্থীর কথা হয়। তারা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা প্রায় আড়াই বছর সময় পায়। আড়াই বছর সময় নিয়ে তাদের পরীক্ষা হয় ৫০ নম্বরের। কিন্তু ২০২৩ সালে পরীক্ষার্থীরা মাত্র দেড় বছর সময় পেয়েছে। তুলনামূলক এক বছর কম সময় পাওয়ার পরও তাদের ১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। গত বছর আইসিটি সাবজেক্টের পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। কিন্তু এবার আইসিটি সাবজেক্টও পরীক্ষা দিতে হবে।
এসব বিষয় নিয়ে বেশকিছু দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এবারের পরীক্ষার্থীরা। শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রণালয় ও বোর্ডের ই-মেইল ও সামাজিকমাধ্যমে বার্তা পাঠাচ্ছেন তারা। তবে পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের মতামতের কোনো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) একটি মতামত জরিপ শুরু করা হয়। মতামত জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৮৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা পেছানোর পক্ষে। মতামত জরিপের বিষয় ছিল, ‘এইচএসসি-২৩ ব্যাচের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা পেছানো অথবা সিলেবাস কমানোর দাবি করছে। আপনি কী মনে করেন?’এই প্রশ্নের চারটি সম্ভাব্য উত্তর রাখা হয়। শনিবার দুপুরে এ খবর লেখা পর্যন্ত চারটি উত্তরে মোট মতামত দিয়েছেন ২৮ হাজার ৯৫২ জন। এর মধ্যে ৮৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ পরীক্ষা পেছানোর পক্ষে। সিলেবাস কমানোর পক্ষে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২ দশমিক ২২ শতাংশ মতামত দিয়েছে ‘দুটিই করা উচিত’, এবং ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ মতামত দিয়েছে ‘কোনোটিই করা উচিত নয়’।
এ বিষয়ে ফরিদপুর সরকারি ইয়াসিন কলেজ থেকে পরীক্ষার্থী ফারজানা আকতার বলেন, আমাদের এ অল্প সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব না। গত বছরের পরীক্ষা আড়াই বছর সময় থাকা সত্ত্বেও তারা ৫০ নম্বরের পরীক্ষা দিয়েছে। ২৩ ব্যাচ-এর শিক্ষার্থীদের দেড় বছরে কম সময়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রীর কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি, আমাদের ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হোক।
এ বিষয়ে বিএএফ শাহীন কলেজ, তেজগাঁও-এর পরীক্ষার্থী ফাহিম হাসান বলেন, কোভিড -১৯ পরবর্তীতে শিক্ষাবর্ষের সময় কমিয়ে আনা হয়েছিল। এজন্য আমরা অনেক স্বল্প সময় পেয়েছি। তার মধ্যে শিক্ষাবর্ষে ছুটি ছিল অনেক দিন। এই স্বল্প সময়ে আমাদের সিলেবাস সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ডেঙ্গু বিদ্যমান। এমতাবস্থায় আমাদের পরীক্ষা পেছালে সুবিধা হতো। অন্যথায় এইচএসসি-২২ পরীক্ষার ন্যায় আমাদেরও পরীক্ষার মানবণ্টন ১০০ থেকে কমিয়ে ৫০ করা উচিত এবং আমাদের এই দাবিগুলো যৌক্তিক দাবি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শিক্ষামন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ আমাদের বিষয়টি দেখার জন্য।
এ বিষয়ে ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে এবারের পরীক্ষার্থী আনাস আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা এইচএসসি-২৩ ব্যাচ খুবই স্বল্প সময় পেয়েছি ২২ ব্যাচের তুলনায়। এ ছাড়াও দেশজুড়ে ডেঙ্গুর জন্য অনেক শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বা ছিল। সুতরাং তারাও পড়ালেখায় কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি, সার্বিক বিবেচনায় আমাদেরও ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হোক।
এ বিষয়ে নাটোরের কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্যাপার কলেজের পরীক্ষার্থী নাফিস হাসান সাকি বলেন, এইচএসসি ২০২২ ব্যাচ-এর আড়াই বছরে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ১০০-তে ৫০ মার্কের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। যেখানে সৃজনশীল প্রশ্নতে ৮টার মধ্যে মাত্র ৩টা, নৈর্ব্যত্তিক ২৫টার মধ্যে মাত্র ১৩টার উত্তর দিতে হয়েছে। আমাদের পরীক্ষাও ৫০ নম্বরে নিলে আমরা উপকৃত হবো।
এসব বিষয় নিয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বছর শিক্ষার্থীরা কম সময় পেয়েছে। এজন্য তাদের সিলেবাসও পরিমার্জিত। কম সময়ে যে পরিমাণ সিলেবাস শেষ করা সম্ভব সেই পরিমাণ সিলেবাস রাখা হয়েছে। আপনাদের কাছে শিক্ষার্থীরা যা বলছে তা পুরোটা সঠিক না।
এইচএসসি ২০২৩ ব্যাচের পরীক্ষার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খুব শিগগিরই একটি সংবাদ সম্মেলন করা হবে বলেও কালবেলাকে তিনি জানান।